দীপালি সেন: উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। নতুন ব্যবস্থায় সেমিস্টার ভিত্তিক পাস-ফেলের বিষয় থাকছে না বলে জানালেন উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary Education) শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “একক কোনও সেমিস্টারে পাস-ফেল থাকছে না। তবে, প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার মিলিয়ে পাস-ফেল থাকবে।”
প্রসঙ্গত, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সংসদের তরফে স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে আগেই। প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখে সেমিস্টার ব্যবস্থা কার্যকর করার কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দপ্তর। বর্তমানে সেমিস্টার ব্যবস্থার প্রস্তাবটি সেই কমিটির বিবেচনাধীন। সংসদ সভাপতি জানিয়েছেন, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন পেলে তবেই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নতুন পড়ুয়াদের থেকে চালু করা হবে সেমিস্টার ব্যবস্থা। আর দপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষেই সেমিস্টার ব্যবস্থার সঙ্গেই চালু করা হবে ৪৭টি বিষয়ের নতুন সংশোধিত পাঠ্যক্রম। যে কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। চিরঞ্জীববাবু (Chiranjib Bhattacharya) বলেন, “আমরা যদি ২০২৪-২৫ থেকে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু করতে পারি, আমাদের লক্ষ্য থাকবে নতুন পাঠ্যক্রমটাও একসঙ্গে চালু করার। কারণ, এই দুটো একসঙ্গে চালু হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। সেটা ২০২৪-২৫ হলেই ভালো। না হলে তার পরের শিক্ষাবর্ষে হবে। তবে আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক চললে এবং সরকারি অনুমোদন পেলে হয়তো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু করতে পারব।”
[আরও পড়ুন: আফগানিস্তান সিরিজেই ফিট হয়ে উঠবেন পন্থ! কিন্তু…, বড় সিদ্ধান্ত বিসিসিআইয়ের]
শনিবার ৪৭টি বিষয়ের জন্য তৈরি সিলেবাস সাব-কমিটিগুলির সদস্যদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করলেন সংসদের কর্তারা। প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক সাব-কমিটিতে রয়েছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়, একজন কলেজ ও দুজন করে স্কুলের বিশেষজ্ঞ। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিত, বায়োলজি-সহ ১০-১২টি প্রধান বিষয়ের সাব-কমিটি সিবিএসই স্কুল থেকে একজন করে বিষয় বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে কমিটিতে। তাঁদের সংসদের তরফে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংশোধিত নতুন ও সময়োপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি করা জমা দিতে। সেমিস্টার ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে ওই সময়সীমার মধ্যেই সংশোধিত পাঠ্যক্রমকে দ্বি-ভাগ করতেও বলা হয়েছে সাব-কমিটিগুলিকে।
সংসদ সভাপতি জানিয়েছেন, পাঠ্যক্রম সংশোধনের ক্ষেত্রে মূলত NCERT (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং) পাঠ্যক্রমের কাঠামো অনুসরণেই করা হবে। তাঁর কথায়, “জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলির প্রশ্নপত্র এনসিইআরটি পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে হয়। আমরা চেষ্টা করছি, প্রধান বিষয়গুলির পাঠ্যক্রম এনসিইআরটির সিলেবাসের মতো করে যাতে কিছুটা করা যায়। তবে, কপি-পেস্ট করা নয়। কারণ, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হলেও, ইতিহাস, ভূগোল, সব ভাষা বিষয়গুলিতে এনসিইআরটি থেকে ফ্রেমওয়ার্ক নেওয়া হলেও, স্থানীয় ফ্লেভার রাখতে হবেই।” পাঠ্যক্রম সংশোধন,পাঠ্যক্রমকে দ্বি-ভাগ করার পাশাপাশি সেমিস্টার ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্রের ধরন এবং নমুনা প্রশ্নপত্রও তৈরিও কাজও করবে সিলেবাস সাব-কমিটিগুলি। এদিনের বৈঠকে সদস্যদের সবকিছুই বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সংসদের তরফে। সংসদ সভাপতি বলেন, “পাঠ্যক্রম সংশোধনের ক্ষেত্রে দুটি দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, পড়ুয়াদের শিক্ষার ভিত যেন মজবুত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে তাঁদেরকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতও করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হবে, সেগুলোকেও যেন অতিক্রম করতে পারে।”
[আরও পড়ুন: সংসদে হামলার প্রতিবাদ করায় নয়, অন্য কারণে সাসপেন্ড বিরোধী সাংসদরা, সাফাই বিড়লার]
সেমিস্টার ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষাটি এমসিকিউ ও ওএমআর ভিত্তিক হবে। দ্বিতীয়টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী ও বর্ণনামূলক প্রশ্নভিত্তিক হবে। প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে নভেম্বরে। দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরের বছর মার্চে হওয়ার প্রস্তাব ছিল। দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর মিলিয়েই মার্কশিট তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সংসদের তরফে। অর্থাৎ, দুটি সেমিস্টারের নম্বরের ভিত্তিতেই পরীক্ষার্থী সফল না অসফল তা স্থির করা হবে।