সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। প্রাণ গেল কলকাতা পুলিশের এক এএসআইয়ের। মোমিনপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শনিবার ভোরে প্রাণহানি হয় ওই পুলিশকর্মীর।
নিহত উৎপল নস্কর কলকাতা পুলিশের এএসআই (ASI) ছিলেন। লালবাজারে ছিল তাঁর পোস্টিং। বাঁশদ্রোণী এলাকায় ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন উৎপলবাবু। গত রবিবার জ্বর আসে তাঁর। সোমবার চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী টেস্ট করান। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বৃহস্পতিবার মোমিনপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন তিনি। যমে মানুষে চলে লড়াই। রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।
স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজ্যে চলতি সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু (Dengue) আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৬৬ জন। সরকারি হাসপাতালে ভরতি ২ হাজার ১২৭ জন। এদের মধ্যে ১৫.৯ শতাংশ জটিল সমস্যায় ভুগছেন। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৩৫৭। ফলত সংক্রমণ যে আরও বাড়বে স্বাস্থ্যদপ্তরের এই তথ্য থেকে তা স্পষ্ট। ডেঙ্গু মশা মারার জন্য গাপ্পি মাছ চাষ করতে ৪ কোটি ৫১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৭৯ টাকা স্বাস্থ্যদপ্তর বরাদ্দ করেছে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ ও দার্জিলিং – এই ছয় জেলা মূলত দুশ্চিন্তার কারণ প্রশাসনের কাছে।
[আরও পড়ুন: মাদক পাচারে অভিযুক্ত বাঙালি প্রেমিককে ছাড়াতে আদালতে ফরাসি প্রেমিকা, ছুঁড়লেন ‘উড়ন্ত চুম্বন’]
সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যসচিব জেলাশাসকদের ভেক্টর কন্ট্রোল দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেয়। অর্থাৎ ডেঙ্গুর লার্ভা ডিম নষ্ট করলেই রোগ নির্মূল হবে, এই কথাটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব। বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ২৭ ডেঙ্গু রোগী ভরতি। এদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে হাওড়া, আক্রান্ত ৪ হাজার ৮৬৪ জন। এরপরই কলকাতা (৪ হাজার ৭৪৭)। তৃতীয় স্থানে পূর্ব মেদিনীপুর (৪ হাজার ২০৯)। রাজ্যে সবচেয়ে কম সংক্রমণ ঝাড়গ্রামে (৭৯)। ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকাগুলিতে মোবাইল রক্তপরীক্ষা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ন্যূনতম ১০টি শয্যা ডেঙ্গুর জন্য বরাদ্দ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে ওষুধ ও স্যালাইন রাখতে বলা হয়েছে।
কলকাতা পুর এলাকায় চলতি সপ্তাহে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ৯ নম্বর বরোতে। এখানে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০। এরপর রয়েছে বরো ৮। চলতি সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ জন। বরো ১ নম্বরে ৩৯ জন এবং ৩ নম্বর বরোতে ১৬ জন। কলকাতা পুরসভাকেও বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বাড়ির চারপাশে আরও দশটি বাড়িতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী স্প্রে ছড়ানো বাধ্যতামূলক। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরকর্মীদের একাংশ শুধুমাত্র রোগীর বাড়িতে স্প্রে করে চলে আসছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে কার্যত অসন্তুষ্ট মেয়র ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার জানিয়েছেন, ‘‘যে বাড়িতেই রোগীর সন্ধান মিলবে তার চারপাশে মশা মারার তেল ও ব্লিচিং ছড়াতেই হবে। যদি কোনও কর্মী এই নির্দেশ না মানেন, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’