বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: লোকসভা ভোট সামনে তাই ‘খেলা হবে’ অনেক! উত্তরের ভূমিপুত্রদের ভোট তুলে নিতে জীবন সিংহের ভিডিও ক্লিপিংস বাজারে ছেড়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে গেরুয়া শিবির। ওই শঙ্কায় আগেভাগে কর্মীদের সতর্ক করার কাজ শুরু করে দিলেন কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) নেতৃত্ব। পাশাপাশি নেপালি ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ভোটপ্রচারের জন্য ‘সেপারেট স্টেট ফোরাম’-এর বিমল গুরুংদের সাহায্য নিতে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত বছর জানুয়ারি মাসে জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) সুপ্রিমো জীবন সিংহ ছজন অনুগামীকে নিয়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলার মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নয়াবস্তি এলাকায় আত্মসমর্পণ করেন। ওই সময় তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শান্তি বৈঠকের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সরকারিভাবে ওই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এরপর জল অনেক দূর গড়ালেও কেন্দ্রীয় সরকার শান্তি বৈঠক করেনি। কেপিপি নেতৃত্বের শঙ্কা, কেন্দ্রীয় সরকারের হেফাজতে থাকা জীবন সিংহকে লোকসভা নির্বাচনে কৌশলে প্রচারের কাজে লাগানো হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সূত্রে দলীয় নেতৃত্ব জেনেছেন, ভোটের মুখে জীবন সিংহের আবেদনমূলক ভিডিও বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে উত্তরের রাজবংশী তথা কামতাপুরি ভোট ঘরে তুলতে চাইছে বিজেপি। খবর মিলতে কেপিপি নেতৃত্ব নিচুতলার কর্মী ও সমর্থকদের সতর্ক করার কাজে নেমেছে। ঘরোয়া বৈঠকগুলোতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এর আগেও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাংসদ জিতিয়ে আর ফিরে তাকায়নি। কামতাপুরি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি। পৃথক রাজ্য নিয়েও আলোচনা হয়নি। কোনও ব্যক্তি সেই বিজেপিকে ভোট দিতে আবেদন জানালে সপাটে ফিরিয়ে দিতে হবে।
[আরও পড়ুন: মা হতে চলেছেন দীপিকা পাড়ুকোন! কত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রণবীর ঘরনি?]
কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বর্মন বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে আরও অনেক বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলবে। আমরা সেটা হতে দেব না। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও আশ্বাসে কাজ হবে না।” কেপিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের কাজ চলছে। পাশাপাশি নেপালি ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ভোট প্রচারের জন্য ‘ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেট’ নামে তৈরি মঞ্চের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। ওই মঞ্চে রয়েছেন বিমল গুরুং-সহ একাধিক আদিবাসী নেতা।
কেপিপির এক প্রবীণ নেতা জানান, লোকসভা নির্বাচনে রাজবংশী ভোট বিভাজন রুখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই বিষয়ে আলোচনা চলছে। যদিও ভোট কৌশল নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ কেপিপির সাধারণ সম্পাদক নিখিল রায়। তিনি জানান, কামতাপুর রাজ্য ও ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন আজকের নয়। কয়েকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ দেখায়নি। বিজেপিও নীরব ছিল। এখন ভোটের সময় ওরা অনেক কথা বলবে। সেটা এবার কেউ মানবে না।