সোমনাথ রায়, লেহ: অনশন শেষ। তবে সোনম ওয়াংচুকের আন্দোলন থামছে না। সোনমের ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছে লাদাখের নারী শক্তি। ২৭ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ক্লাইমেট ফাস্ট’ কর্মসূচির গুরুদায়িত্ব তুলে নিয়েছেন লেহ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মা বোনেরা।
অনশনরত সোনম ওয়াংচুক জানিয়েছিলেন, লাদাখের জলবায়ু, পরিবেশ রক্ষার লড়াই এখনই বন্ধ হবে না। দাবি না মেটা অবধি ‘অহিংস’ আন্দোলন চলতে থাকবে। সোনমের সেই হুঙ্কার যে ফাঁকা আওয়াজ নয়, তার প্রমাণ মিলছে আন্দোলনস্থলে গিয়েই। ১৫ থেকে ৮০। বিভিন্ন বয়সের মহিলারা উপস্থিত অনশনমঞ্চে। কেউ লাগাতার অনশন করছেন, কেউ আবার করছেন রিলে অনশন। উদ্দেশ্য একটাই, কেন্দ্রকে বুঝিয়ে দেওয়া যে পাহাড়ের বরফ গলা শুরু হয়ে গেলেও এত সহজে গলবে না আন্দোলনের বরফ।
[আরও পড়ুন: দেবজিতের গ্লাভসে বন্দি মোহনবাগান, যুবভারতীতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জয় চেন্নাইয়ের]
গৃহবধূ থেকে জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া বৃদ্ধা- নিজেদের দাবি মেটাতে মাইনাস তাপমাত্রাতেও খোলা মাঠে রাত কাটাচ্ছেন। সারাদিন ধর্মগ্রন্থ থেকে শ্লোক আওড়ে যেতে এক ফোঁটাও বিরক্তি নেই। ৬৮ বছরের ওয়াংডো মাইঝি বলছিলেন, “রেশন বন্ধ করে দিয়েছে। কাউকে সরকারি চাকরি দেয় না। আমরা যে মোদির কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি, কে জানে?” বুটিকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে লেহ শহর থেকে আট কিলোমিটার নিচের গ্রাম থেকে এসেছেন বছর পঞ্চাশের সোনম স্পালজাস। তাঁর কথায়, “আমাদের তো জীবন শেষ হয়ে এল। বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা তো মাথায় রাখতে হবে। সোনম ওয়াংচুককে আমরা ভরসা করি। উনি ডাক দিয়েছেন বলেই ছুটে এসেছি।”
লেহ পার্শ্ববর্তী চোকলাম সার গ্রামের ৪৬ বছর বয়সি কুনজিস লামোর আক্ষেপ, “আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন? বিজেপির একজন নেতাও এখনও পর্যন্ত এখানে আসল না। আমাদের আন্দোলন তো কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। লাদাখের জন্য। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই সোনমের জন্য আসেনি। এখন তো উনি অনশন করছেন না। তবু সময় পাচ্ছে না? এতেই প্রমাণ হয়, ওরা লাদাখের কথা ভাবে না।” মাঙ্গু গ্রামের ৩০ বছরের সোনা মাঙমো মনে করিয়ে দিলেন সোনমের হুঁশিয়ারি। বললেন, “এই লড়াই গোটা লাদাখের লড়াই। মনে রাখবেন, আমাদের পর যুব, ভিক্ষু, প্রবীণরা আন্দোলন করবেন। বিজেপি বলছে ওরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতি দিয়েছে, মনে রাখবেন এই দাবি ৭০ বছরের। কাজেই এসব বলে লাভ হবে না।”