কৃষ্ণকুমার দাস: দেবতাকে স্পর্শ করলেই জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা হবে অভিযুক্তকে। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথে ওঠার চেষ্টা করলেই ঠাঁই হবে শ্রীঘরে। রবিবার পুণ্য রথযাত্রা উৎসবে এটাই এবার পুরীর আইনি বিধান। জগন্নাথদেবের দর্শনে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন পুরীতে। কয়েক হাজার বছরের পৌরাণিক রীতি ও আচার মেনে রবিবার দুপুরের পর নীলাচলে ভক্ত সমুদ্রে ভাসবেন মহাপ্রভু জগন্নাথ। আর তাই নিরাপত্তায় কোনও ঘাটতি রাখতে চাইছে না প্রশাসন।
কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই কড়া নিয়ম চালু করা হয়েছে। শুধু ভক্ত নয়, প্রভু জগন্নাথকে ছুঁতে ভক্তকে যদি মন্দিরের কোনও সেবায়েত সাহায্যের হাত বাড়ান তবে তাঁকেও পাঠানো হবে পুলিশ হেফাজতে। এদিন বিগ্রহের রথে ওঠার ‘পহণ্ডি’ বা উল্টোরথে গুন্ডিচা মাসির বাড়ির ‘বেহুড়া’ যাত্রা, দুই মাঙ্গলিক কর্মসূচিতেই চালু হয়েছে দেবতা স্পর্শে এমন কড়া নিষেধাজ্ঞা। তবে পুরীর রথযাত্রা উৎসবে দেবতাদের তিন রথ স্পর্শ বা দড়ি টানায় কোনও বাধা নেই।
[কৃষিঋণের বোঝা কমাতে একমাসের বেতন দান মহারাষ্ট্রের মন্ত্রীদের]
তবে ভক্তদের মনে কৌতূহল, বিগ্রহ স্পর্শে এবছর পুলিশ ও প্রশাসনের কেন এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা? দেবতাকে স্পর্শ করতে গিয়ে দারুব্রহ্মের তৈরি তিন বিগ্রহের অনেক ক্ষতি হয়। ক্ষত–বিক্ষত হয়ে যায় তিন বিগ্রহের শরীর। অধিক পুণ্য সঞ্চয় এবং স্মারক হিসাবে সংগ্রহ করার লক্ষ্যের অনেক ভক্ত দেবতাদের পোশাকও ছিঁড়ে নেন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় জগন্নাথ–বলরাম–সুভদ্রার ফুলের মালা ও অঙ্গসজ্জা। এখানেই শেষ নয়, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ শোনা যায়। ভক্তের আকুতি ও পুণ্য লাভের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নামে নাকি এক শ্রেণির সেবায়েত মোটা টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীর স্ত্রী–পুত্রকন্যাকেও রথে তুলে বিগ্রহের কাছে পৌঁছে দিচ্ছিলেন সেবায়েতরা। বস্তুত এমনই নানা অনৈতিক ও ‘অধর্মীয়’ অপকীর্তি রুখতে আদালতের নির্দেশকে হাতিয়ার করে প্রভু জগন্নাথদেবের স্পর্শ বন্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করল ওড়িশা সরকার। নীলাচলের রথযাত্রা উৎসবের দায়িত্বে থাকা জেলাশাসক অরবিন্দ আগরওয়াল শনিবার জানান,“কটক হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই বিগ্রহ স্পর্শ করলে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা হবে অভিযুক্তকে। পহণ্ডি বা বেহুড়া যাত্রা দুই কর্মসূচিতেই সেবায়েত ও ভক্তদের আইন মেনে চলতে বলা হয়েছে।”
[মসজিদের টাকা চুরি, অভিযুক্তর সাফাই শুনে হতবাক জনতা!]
প্রথমে বলরামের তালধ্বজ, পরে সুভদ্রার দেবীদলন এবং শেষে প্রভু জগন্নাথদেবের নন্দীঘোষ রথের রশিতে টান দেবেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বেশ কয়েক হাজার জগন্নাথভক্ত পুণ্য রথযাত্রা উৎসবে অংশ নিতে এদিনই ট্রেন ও সড়ক পথে পুরী পৌঁছে গিয়েছেন। বিমানও ধরেছেন কিছু ভক্ত। তিন দিন আগে দেবীদলন রথের একটি চাকা ভেঙে গিয়েছিল। তা নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে যাতে কেউ রথে উঠে বিগ্রহকে স্পর্শ না করতে পারেন তার জন্যও অতিরিক্ত আলো ও নজরদারির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। গত রাত থেকেই পুরীর মূল মন্দিরের ভিতর ও বাইরের পাশাপাশি দেবতাদের তিন সুসজ্জিত রথের দখল নিয়েছে পুলিশ ও আধা সেনা। রাস্তায় অজস্র সিসিটিভি বসিয়েছে পুলিশ–প্রশাসন। এই প্রথম গর্ভগৃহের সামনে থেকে শুরু করে নাটমন্দির, সিংহদুয়ার সর্বত্রই বসেছে অতিরিক্ত সিসিটিভি এবং এসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে কন্ট্রোলরুম চালু হয়েছে। ঐতিহ্য ও রীতি মেনে এবছরও পুণ্য রথযাত্রার শুভসূচনা করবেন প্রভু জগন্নাথদেবের আবাহনকারী পুরীর মহারাজ ইন্দ্রদু্যম্নের বংশধর। থাকবেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রীরাও।
The post রথের রশির টানে পুরীতে অসংখ্য ভক্ত, জগন্নাথের বিগ্রহ স্পর্শে নিষেধাজ্ঞা appeared first on Sangbad Pratidin.