অর্ণব আইচ: গড়িয়াহাট বা হাতিবাগানের ভিড়ে চৈত্র সেলের (Chaitra Sale) বাজার করতে গেলে পকেটমারদের ‘শিকার’ হয়ে যেতে পারেন ক্রেতারা। এমনকী, শপিং মলেও ক্রেতা সেজে ঘোরাফেরা করে মহিলা কেপমাররা। তাই বহু সতর্ক ক্রেতাই এখন পয়লা বৈশাখের (Poila Baisakh 2022) আগে চৈত্র সেলের বাজার করেন অনলাইনে। কিন্তু অনলাইন বাজারেও যে ঘনাচ্ছে বিপদ। ওত পেতে রয়েছে সাইবার জালিয়াত ও হ্যাকাররা। একটু অসাবধান হলে বা তাদের পাতা ফাঁদে পা দিলেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে কষ্ট করে আয় করা সঞ্চয়।
এখানেই শেষ নয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের দাবি, আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ, নববর্ষের শুভেচ্ছায়ও লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদ। ‘শুভ নববর্ষ’ লেখা ছবি, ভিডিও বা পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করলেই হ্যাকড হয়ে যেতে পারে মোবাইল। তাই বাংলার নতুন বছরের আগে থেকেই কলকাতাবাসীকে সতর্ক করছেন লালবাজারের গোয়েন্দা ও সাইবার বিশেষজ্ঞরাও।
নতুন বছরের নতুন জামাকাপড় থেকে শুরু করে রসগোল্লা বা জিভে জল আনা মিষ্টি। ফাঁদ পাততে সব কিছুকেই ‘হাতিয়ার’ করছে সাইবার জালিয়াত বা হ্যাকাররা। এমনকী, নতুন বছর, গুড ফ্রাইডের টানা ছুটি কাটানোর মধ্যেও লুকিয়ে আছে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদ। সাধারণভাবে মেসেজ আসছে কোনও একটি অচেনা নম্বর থেকে। বলা হচ্ছে, নববর্ষের আগে সস্তায় জামাকাপড় বা মিষ্টি কেনার দুর্দান্ত অফার দেওয়া হচ্ছে একটি বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকে। এমনকী, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু শাড়ি, সালোয়ার কামিজ বা পাঞ্জাবির ছবি পাঠানো হচ্ছে। আবার পাঠানো হচ্ছে লোভনীয় সব খাবারের ছবিও। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে বিচিত্র সব উপহারের অফার।
[আরও পড়ুন: রেফার-রোগ নির্মূলে সতর্কতা রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের, হাসপাতালে চালু হচ্ছে ই-প্রেসক্রিপশন]
এই জিনিস বা খাবার কেনার সময় যদি কপালে লটারি লেগে যায়, তবে প্রায় বিনামূল্যেই চৈত্রের শেষে হাতে চলে আসবে নতুন জিনিসপত্র। এই ‘আকর্ষণীয় অফার’ পেতে কেউ কোনও লিঙ্কে ক্লিক করলেই ঘনাচ্ছে বিপদ। মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে উঠছে নানা রঙের আলো। কখনও বা কালো হয়ে যাচ্ছে মোবাইলের স্ক্রিন। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল হ্যাক করার সময় এই ধরনের ‘ঘটনা’ হয়। হ্যাকাররা ক্রেতাদের মোবাইলের ‘দখল’ নিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেয় টাকা।
এ ছাড়াও কিউআর কোড পাঠিয়ে বা OTP জেনেও নতুন বছরের আগে ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। সাইবার বিশেষজ্ঞ হৃতিক লাল জানান, বিভিন্ন নামী বা বেনামী সংস্থার আড়ালে সাইবার অপরাধীরা ফাঁদ পাতে। তাই অনলাইনে বাজার করার আগে দেখে নিতে হবে আদৌ যে সংস্থাটি অফার দিচ্ছে, সেটি আসল না নকল। তাই গ্রাহকদের সবসময়ই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ‘প্রাইভেট’ ও লক করে রাখা উচিত। একমাত্র পরিচিতদের কল বা মেসেজেরই উত্তর দেওয়া উচিত। উপহার বা অফার যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, কেউ যেন উত্তর না দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠানো কোনও ধরনের লিংক যেন কেউ ক্লিক না করেন। কাউকে কোনও ধরনের OTP যেন না দেওয়া হয়। কোনও সংস্থা যদি কোনও গ্রাহককে তাদের ‘লাকি’ বা ভাগ্যবান ক্রেতা বলে গণ্য করে অফার দেয়, তিনি যেন অবশ্যই তা এড়িয়ে চলেন।
এদিকে, লালবাজারের গোয়েন্দাদের পরামর্শ, অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া সুপ্রভাত বা নববর্ষের কোনও ধরনের ছবি, ভিডিও বা পিডিএফে ক্লিক না করাই ভাল। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান, নববর্ষের ছবি বা ভিডিওর মধ্যেও লুকিয়ে থাকতে পারে ম্যালওয়ার। আবার অনেক সময় পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া ‘ফরওয়ার্ডেড মেসেজেও ম্যালওয়্যার থাকতে পারে। এর মাধ্যমে মোবাইলের দখল নিতে পারে সাইবার অপরাধীরা। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে হোয়াটসঅ্যাপের (Whatsapp) ‘অটো ডাউনলোড অপশন’ বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।