সোমনাথ লাহা: প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্যের ডালি সজ্জিত উত্তরবঙ্গ বহুদিন ধরেই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হয়ে উঠেছে অন্যতম প্রিয় জায়গা। যেখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার মন প্রাণকে অচিরেই চাঙ্গা করে তুলবে। এমন কিছু জায়গা রয়েছে সেখানে যেগুলি আগে ততোধিক পরিচিত না হলেও এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। এমনই একটি জায়গা হল লামাহাট্টা। দার্জিলিং থেকে এর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। প্রায় ৫,৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামেই ২০১২তে গড়ে ওঠে ইকো-টুরিজম প্রকল্প। ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে সেখান থেকে অথবা দার্জিলিং থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন লামাহাট্টায়। পাইন ও ধুপি গাছের জঙ্গল এবং ইকো টুরিজম পার্কই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। শহুরে কোলাহলে অভ্যস্ত কান এখানকার জঙ্গলে হাঁটতে বেরোলে পাবে নির্জনতার আস্বাদ। জংলি পথে হাঁটতে হাঁটতে ট্রেকিং করে পৌঁছে যেতে পারেন আরেক টুরিস্ট স্পট তাকদায়। দেখে নিতে পারেন অর্কিড সেন্টার। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ৮ কিলোমিটার ট্রেকিং ট্রেল রয়েছে এখানে।
[চোখের সামনে বাঘ দেখতে চান? পাড়ি জমাতে পারেন এই সব অরণ্যে]
[কনকনে বাতাস আর নরম আলোর সাম্রাজ্যে ভ্রমণপিপাসুদের স্বাগত জানাতে তৈরি ‘উত্তরে’]
মেঘলা আবহাওয়ায় গাছের ফাঁকে ফাঁকে মেঘের লুকোচুরি দেখুন প্রাণ ভরে। বিশেষ করে জঙ্গলের পথে হাঁটার আলাদা আনন্দ রয়েছে এখানে। শহুরে কংক্রিটের মধ্যে থেকে যারা বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারেন না এখানে পৌঁছে বুক ভরে নিশ্বাস নিন। ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি যারা পছন্দ করেন, তাঁরা প্রচুর ছবি তোলার সুযোগ পাবেন। তবে সঙ্গে স্থানীয় কাউকে অবশ্যই নেবেন। কারণ পথ হারালে বিপদ হতে পারে। লামাহাট্টার ইকো-টুরিজম পার্কে গেলে দেখতে পাবেন নানা রঙের ফুলের মেলার সমাহার। সঙ্গে হরেক রকম বাহারি অর্কিড। এক কথায় চোখের আরাম নিশ্চিত৷ পার্কে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসার ব্যবস্থা রয়েছে ইতিউতি। চাইলে কাঠের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে লামাহাট্টার সৌন্দর্য দেখে নিতে পারেন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখে নিতে পারবেন৷ পাহাড়ের গায়ে সজ্জিত এই পার্কের মাথায় রয়েছে একটি লেক, যেতে পারেন সেখানেও। গোটা স্থানটিই রঙিন পতাকা দিয়ে সজ্জিত। লামাহাট্টা থেকে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের চায়ের বাগানগুলিতে৷ যেমন, গ্লেনবার্ন টি-এস্টেট, রংলি টি-এস্টেট কিংবা তাকদা টি-এস্টেট৷ টি এস্টেটে গিয়ে চায়ে চুমুক দিতে ভুলবেন না। মন চাইলে ৩ কিলোমিটার হেঁটে গাড়িডান্ডায় পাহাড়ের উপরে অবস্থিত দুর্গ দেখতে যেতে পারেন। তিস্তা ও রঙ্গিতের সঙ্গমস্থল দেখতে পৌঁছে যান পেশোক ভিউ পয়েন্টে। এই দুই নদী যেখানে মিলিত হয়েছে সেই জায়গাটির নাম ত্রিবেণী। চারপাশের দৃশ্য ভারি সুন্দর।
[মেঘলা দিনে প্রকৃতির এই রূপ পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছেন?]
[এক যুগ পর মুন্নারের আন্নামালাই পাহাড় রূপ নিল বেগুনি উপত্যকার, কিন্তু কেন?]
লামাহাট্টার আরেক অন্যতম আকর্ষণ হল হোম স্টে। ইকো-টুরিজমের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার ফলে তৈরি হয়েছে হোম-স্টেগুলি। কেতা দুরস্ত না হলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সবই রয়েছে এখানে। উপরি প্রাপ্তি বাড়ির মতো আন্তরিকতা। রান্নায় পাবেন ঘরোয়া স্বাদ। লামাহাট্টা ভ্রমণে যখন বেরোবেন তখন এই হোম স্টে থেকেই কাউকে গাইড হিসাবে সঙ্গে নিতে পারেন।
[গভীর অরণ্যে রোমাঞ্চ-সফর, গজলডোবা ট্যুরিজম সার্কিটে বাইসাইকেল সাফারি]
The post পাইন আর ধুপি গাছের জংলি পথে হারাতে পা বাড়ান লামাদের ঘর লামাহাট্টায় appeared first on Sangbad Pratidin.