স্টাফ রিপোর্টার: কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আকাশে জ্বালানি কমে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে ইন্ডিগোর পাটনা-কলকাতা উড়ান৷ বিমানে ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ মুকুল রায়, রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বীরেন্দ্র-সহ প্রায় ১৮০ জন যাত্রী৷ কেন, কীভাবে যথেষ্ট জ্বালানি না থাকা সত্ত্বেও বিমানটি মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিকে নিয়ে আকাশে উড়ল, কেন কলকাতার কাছে এসেও নামার অনুমতি মিলতে প্রায় চল্লিশ মিনিট দেরি হল, তা নিয়ে প্রবল আলোড়ন তৈরি হয়েছে৷ ফিরহাদ অভিযোগ করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্ত হয়েছিল৷ যেহেতু উনি মানুষের জন্য লড়াই করছেন, তাই ওঁকে শেষ করে দিতে চায়৷” তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মরতে ভয় পান না৷ কিন্তু অন্য যাত্রীদের নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন৷ জরুরি অবতরণের কথা স্বীকার করে বিমানবন্দরের ডিরেক্টর, অতুল দীক্ষিত বলেন, “পাইলট এটিসিকে জানিয়েছিলেন, জ্বালানি কম৷ সেকারণেই জরুরি অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়৷” মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে নামার সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বিমানবন্দরে কার্যত রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়৷ প্রস্তুত রাখা হয় দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ মেডিকেল টিম৷ শেষ অবধি বিমানটি নিশ্চিন্তে অবতরণ করায় সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন৷ মজার কথা হল, এত কাণ্ড যে ঘটেছে, কিছুই জানা ছিল না মুখ্যমন্ত্রী কেন, কোনও যাত্রীরই৷ করিডোর থেকে বেরনোর পর মুখ্যমন্ত্রী সব জানতে পারেন৷ শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন৷
কী ঘটেছিল এদিন? ইন্ডিগোর ৬ই৩৪২ বিমানটি পাটনা থেকে ওড়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে৷ মঙ্গলবার লখনউ থেকে এই বিমানটিতেই পাটনায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন সভা শেষ করে পাটনায় সরকারি অতিথিশালায় বিমান ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মমতা৷ বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার বলেই এখানে অপেক্ষা করছিলেন তিনি৷ কিন্তু জানতে পারেন, বিমান লেট৷ শেষ অবধি এক ঘণ্টা দেরিতে বিমানটি এসে পৌঁছয়৷ ৭টা ১৫-য় প্রস্থানের সময় দেওয়া হলেও সেটি ওড়ে ৭ টা ৩৫ নাগাদ৷ কলকাতা থেকে পাটনা বিমানপথে ৪৭০ কিলোমিটার৷ ৪৫ মিনিটেই এই দূরত্ব পূরণ করে বিমান৷ আটটা নাগাদ পাইলট হঠাত্ ঘোষণা করেন, “কলকাতা থেকে আমরা ১৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছি৷” তার একটু বাদেই আবার তিনি বলেন, “দেরি হওয়ায় ট্রাফিক সমস্যায় বিমানটি নামতে নির্ধারিত সময়ের পনেরো মিনিট দেরি হবে৷” এর পরের পর্বটি যাত্রীদের অজানা৷ পরে জানা যায়, কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসির এই নির্দেশ শোনার পর আঁতকে ওঠেন পাইলট৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “বিমানটিতে জ্বালানি যা আছে, তাতে এতক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না৷ এখনই নামার অনুমতি দেওয়া হোক৷” এই অনুরোধ পাওয়ার পরই এটিসি নামার অনুমতি দেয় বলে খবর৷ কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, বিমানটি নামতে আরও চল্লিশ মিনিট সময় লাগল কেন? ৮টা ৪০ মিনিটে নাগাদ বিমানটি অবতরণ করে৷ ততক্ষণে অবশ্য কলকাতা বিমানবন্দরে কার্যত রেড অ্যালার্ট ডারি হয়ে গিয়েছে৷ প্রস্তুত হয়ে পড়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা টিম৷ বন্ধ রাখা হয়েছিল অন্য বিমানের বোর্ডিং৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য নির্বিঘ্নেই অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ইন্ডিগোর বিমান৷ এর পর এটি বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা৷ প্রশ্ন উঠছে, যে কোনও বিমানবন্দরে নামতে গেলে ট্রাফিক সমস্যা হতেই পারে৷ তার জন্য বিমানে পর্যাপ্ত জ্বালানি রাখা হয়৷ এক্ষেত্রে কী এমন ঘটল দিল্লি থেকে কলকাতা আসার মধ্যেই বিমানের জ্বালানি কমে গেল? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইলট বিপদ বুঝেই এটিসিকে সংকেত পাঠায়৷ আরও বেশিক্ষণ চক্কর দিতে হলে দুর্ঘটনা এড়ানো শক্ত হয়ে পড়ত৷ প্রশ্ন, কেন এমন ঘটবে? আর যে বিমানে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন? সঙ্গে প্রায় ১৮০ জন যাত্রী৷ পরে রাতে বিমানবন্দরসূত্রে জানানো হয়, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান আগরতলা থেকে কলকাতা আসছিল৷ সেই বিমানের পাইলট জানান, মাত্র চার মিনিট ওড়ার মতো জ্বালানি রয়েছে৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী যে বিমানে ছিলেন, তার জ্বালানি ছিল সাত মিনিটের৷ স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের আগে ওই বিমানকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়৷
The post মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের জরুরি অবতরণ, হত্যার চক্রান্তের অভিযোগ তৃণমূলের appeared first on Sangbad Pratidin.