কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: চার ফুট বাই আড়াই ফুটের চেহারার চারপেয়ে। এমনিতে শক্তি অসীম। একাই চারজন মানুষকে ঘায়েল করতে সক্ষম। কিন্তু সল্টলেকের (Salt Lake)রেসকিউ সেন্টারে গিয়ে যে লেঙ্গুরটিকে (Langur) দেখা গেল, তাকে দেখে বোঝার উপায়ই নেই যে শরীরে এত বল তার। কারণ, সে অচৈতন্য। পেটে ছ’ইঞ্চি লম্বা গভীর ক্ষত থেকে নাড়িভুঁড়ি অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। ধারালো দাঁতের আঘাত দেহের সর্বত্র। চিকিৎসক এবং বনদপ্তরের আধিকারিকদের অনুমান, সঙ্গিনীর অধিকার নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল দুই লেঙ্গুর। সেই লড়াইতে মারাত্মক জখম হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল প্রায় চার ফুট লম্বা, আড়াই ফুট চওড়া চেহারার এই বন্যপ্রাণী। কিন্তু এখন অন্তত জীবনযুদ্ধে সে জিতেছে। অস্ত্রোপচারের পর খানিক সামলে উঠেছে।
ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল রেসকিউ সেন্টার অ্যান্ড ট্রানজিট ফেসিলিটি সেন্টারের অফিস সল্টলেকে। সেখানে বুধবার গভীর রাতে লেঙ্গুরটিকে হাওড়া থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অপারেশন করেছেন পশুচিকিৎসক ডাঃ কল্যাণকুমার চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, “বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। প্রায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তবে চিকিৎসা সফল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে খাওয়াদাওয়া করেছে জখম লেঙ্গুর। খাঁচার ভিতর খানিকটা লাফালাফি করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।” চিকিৎসক জানিয়েছেন পেটের ভেতরে থাকা ঝিল্লি পেরিটোনিয়াম ছিঁড়ে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে এসেছিল। সেগুলি প্রতিস্থাপন করে তিনটি স্তরে সেলাই করতে হয়েছে। মোট ষাটটির উপর সেলাই পড়েছে পেটে। বৃহস্পতিবার তাকে সামান্য খাবারদাবার দেওয়া হয়েছে। এখন কম করে দিন পাঁচেক স্যালাইন এবং অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স চলবে। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরে পেয়েছে লেঙ্গুরটি।
[আরও পডুন: গান গেয়ে পাকিস্তানে কুলফি বেচছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! ব্যাপারটা কী? দেখুন ভিডিও]
সল্টলেকের রেঞ্জ অফিসার মনোজকুমার যশ জানিয়েছেন, “হাওড়ার উলুবেড়িয়া থেকে লেঙ্গুরটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ও একটি গৃহস্থবাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছিল। সেখান থেকে হাওড়া বনদপ্তরে খবর দেন সেখানকার বাসিন্দারা। হাওড়া পশুটিকে উদ্ধার করে সল্টলেকে পাঠায়। সল্টলেক বনদপ্তরের আধিকারিক এবং চিকিৎসকের অনুমান, এক সঙ্গিনীর জন্য দুই লেঙ্গুর মরণপণ যুদ্ধে নামে। এরকম ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এটির আঘাতের ধরন দেখে মনে হচ্ছে কোনও এক সঙ্গিনীর জন্য দুই লেঙ্গুর লড়াই করছিল। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে লেঙ্গুরের সংখ্যা বাড়তির দিকে। প্রতি মাসে রেসকিউ সেন্টার দশটির মত লেঙ্গুরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। তাদের অধিকাংশই বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এসে আহত হয় বলে দেখা গিয়েছে। মারামারির ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দিন দশেকের মধ্যেই লেঙ্গুরটি সুস্থ হয়ে যাবে। তারপর তাকে আবার তার পরিচিত জায়গায় ছেড়ে আসা হবে।