সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯০২ সালের ৪ জুলাই। স্বামী বিবেকানন্দের তিরোধান দিবস। সেদিন রাত ৯টার একটু পরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন স্বামীজি। অথচ সারা দিন ছিলেন অন্যদিনের মতোই কর্মব্যস্ত। ভক্তদের কারও মনে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনও রকম আশঙ্কা ছিল না। কেমন ছিল তাঁর শেষ দিনটা?
আর পাঁচটা দিনের মতোই সেদিন সকালেও খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)। আকাশ ছিল মেঘে ভরা। বৃষ্টি পড়ছিল। সেই ছায়াচ্ছন্ন সকালে মন্দিরে দীর্ঘ সময় উপাসনায় মগ্ন ছিলেন স্বামীজি। শরীরে অসুস্থতার কোনও লক্ষণই ছিল না। পরে প্রাতঃরাশে দুধ,ফল খেতে খেতে সকলের সঙ্গে হাসিঠাট্টাও করেন। চা-কফিও খান। খানিক পরে গঙ্গা থেকে ইলিশও কেনেন। স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে খানিকক্ষণ বেড়ান গঙ্গাপাড়ে। এর পর সাড়ে আটটা নাগাদ বসলেন ধ্যানে। তা চলল এগারোটা পর্যন্ত। গান গেয়ে উঠলেন, ‘শ্যামা মা কি আমার কালো…’
[আরও পড়ুন: ব্যাট ছেড়ে হাতে র্যাকেট! জকোভিচের সঙ্গে টেনিস খেলায় মাতলেন স্টিভ স্মিথ, মুহূর্তে ভাইরাল ভিডিও]
দুপুরের খাওয়ায় ছিল ইলিশের আধিক্য। ঝোল থেকে ভাজা, বছরের প্রথম ইলিশ মাছ বেশ তৃপ্তি করে খেলেন। এর পর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়েন স্বামীজি। অল্প সময় পরে জেগেও ওঠেন। সেই প্রথম সামান্য শরীর খারাপের কথা জানালেন। মাথা ব্যথা করছিল তাঁর। কিন্তু পরে ফের লাইব্রেরিতে গিয়ে ব্যাকরণ পড়ালেন সাধু-ব্রহ্মচারীদের। এর পরই তাঁকে খানিকটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।
বিকেলে এক কাপ গরম দুধ খেয়ে স্বামী প্রেমানন্দকে নিয়ে বেড়িয়ে এলেন বেলুড় বাজার পর্যন্ত। অন্যদিনের থেকে হাঁটলেন অনেকটা বেশি। প্রায় দুই মাইল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ মঠে ফিরে বিবেকানন্দ বললেন, ”আমার শরীর আজ খুব ভালো আছে।” কে জানত, তাঁর নশ্বর জীবন তখন আর মাত্র কিছুক্ষণের।
[আরও পড়ুন: আলিবাগের রাজপ্রাসাদে সব থাকলেও, নেই টিভি! কিন্তু কেন? নিজেই জানালেন বিরাট]
পৌনে আটটা নাগাদ নিজের ঘরে থাকাকালীন শিষ্যদের বলেন, ”গরম লাগছে। জানলা খুলে দাও।” মেঝের বিছানায় শুয়েও পড়লেন। রাত ৯টা নাগাদ চিৎ অবস্থা থেকে বাঁদিকে ফেরার পরই ডান হাতা কেমন কেঁপে উঠল। কপালে দেখা দিল বিন্দু বিন্দু ঘাম। শিশুদের মতো কেঁদেও ফেললেন। রাত ৯টা ২ থেকে ৯টা ১০-এর মধ্যবর্তী সময়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ফের দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এর পর মাথা নড়ে উঠল। পড়ে গেল বালিশ থেকে। চোখ তখন স্থির। অথচ মুখে সেই অপরূপ উজ্জ্বল হাসি। প্রাথমিক ভাবে তাই বোঝা যায়নি কী হয়েছে। শিষ্যদের ধারণা ছিল সমাধি হয়েছে তাঁর। কিন্তু পরে ডাক্তার এসে জানালেন সব শেষ।
বিবেকানন্দ নাকি বলতেন, চল্লিশ পেরবেন না তিনি। প্রয়াণও হল ৩৯ বছর বয়সে। তিনি কি সত্যিই বুঝতে পেরেছিলেন মৃত্যু সমাগত? জানা যায়, মারা যাওয়ার দুদিন আগে সিস্টার নিবেদিতাকে (Sister Nivedita) নিজের সামনে বসিয়ে পঞ্চব্যাঞ্জন খাইয়েছিলেন। তার পর তাঁর পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। এমন আচরণে অবাক হয়েছিলে নিবেদিতা। জানতে চেয়েছিলেন কেন স্বামীজি এমন করলেন। উত্তরে বিবেকানন্দ মনে করিয়ে দেন, যিশুর কথা। তিনিও যে এমনই করেছিলেন শিস্যদের সঙ্গে। শুনে অবাক হয়ে নিবেদিতা বলেছিলেন, ”সে তো লাস্ট সাপারের সময়।” উত্তরে সামান্য হেসে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ”সিলি গার্ল।” দুদিন পরে নিবেদিতা অবশ্যই বুঝতে পেরেছিলেন, স্বামীজির কথার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ইঙ্গিতকে। সকলকে এভাবেই অপ্রস্তুত করে দিয়ে অকালেই বিদায় নিয়েছিলেন বাংলার সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী।