দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সিপিএম কর্মীকে ভিডিও কল নগ্ন যুবতীর! বেগতিক বুঝে ফোন রাখতেই টাকা চেয়ে মেসেজ করার অভিযোগ। বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ চন্দননগরের (Chandannagar) সিপিএম নেতা। ইতিমধ্যেই চন্দননগর থানা ও চুঁচুড়া সাইবার ক্রাইমে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে সকলকে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ওই নেতা।
রবিবার সন্ধেয় চন্দননগরে সিপিএমের কার্যালয়ে ছিলেন বামনেতা গোপাল শুক্লা। তিনি তখন ফেসবুক করছিলেন। হঠাৎই মেসেঞ্জারে একটি ভিডিও কল আসে। ভয়েস কল ভেবে তিনি সেটি রিসিভ করেন। এরপরই দেখেন, নগ্ন অবস্থায় ফোনের ওপারে এক যুবতী নানারকম অঙ্গভঙ্গি করছে। ১৫ সেকেন্ড ভিডিও কলটি চলার পর তিনি কেটে দেন। কিন্তু এই ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি ওই ভিডিও কলের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন। এরপরই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে অন্যান্যদের সতর্ক করেন। পাশাপাশি চন্দননগর থানার পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে রাখেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সিপিএম নেতার মেসেঞ্জারে একটি মেসেজ আসে। পাশাপাশি সাইবার অপরাধী ভিডিও কলের স্ক্রিনশট পাঠায় তাকে। বামনেতাকে জানানো হয়, টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিলে ছবি ডিলিট করা হবে। নাহলে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন: আসানসোলে অগ্নিমিত্রার প্রচারে বিহারি মনোজ তিওয়ারি, গানের ভাষায় তোপ ‘বিহারি’ শত্রুঘ্নকে]
বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে পালটা ভিডিও কলের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে অপরাধীদের হুঁশিয়ারি দেন সিপিএম নেতা। গোপালবাবুর এই মেসেজের পরই অপরাধী বুঝতে পারে যে, ভুল জায়গায় ঢিল ছোঁড়া হয়েছে। এরপরই অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যায়। সোমবার চন্দননগর থানা ও চুঁচুড়া সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল শুক্লা। পাশাপাশি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে বন্ধুদের সতর্ক করে লেখেন, এই ধরনের অপরাধের শিকার যে সকল মানুষ তারা যেন এগিয়ে এসে লড়াইয়ে শামিল হন। গোপালবাবু জানান, তিনি চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছেন। এবং যতদিন বাঁচবেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। তবে তার মতে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করাটা আরও বড় অপরাধ।
পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিকদের কথায়, ভিডিও কল চলাকালীন তার স্ক্রিনশট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এই ধরণের সেক্সটরশনের শিকার হয়ে অনেকেই সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে চান না। অনেক সময় আবার কোনও কোনও ব্যক্তি অপরাধীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তাদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কোনওরকম ভয় না পেয়ে তারা যেন সাইবার ক্রাইম বিভাগের দ্বারস্থ হন। তাতে অপরাধীরাও কোন অপরাধ করার আগে দশ বার ভাববে। তবে ইতিমধ্যেই হুগলি জেলা জুড়ে গ্রামীণ পুলিশ ও চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশের পক্ষ থেকে সাইবার অপরাধ কমাতে বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতা শিবির করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও অপরাধীদের অপরাধের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তিত পুলিশ প্রশাসনও।