শুভঙ্কর বসু: পুজো মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’-র নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে যে সব সেলিব্রিটিরা ক্লাব সদস্য না হয়েও অষ্টমীর সকালে মণ্ডপে প্রবেশ করে অঞ্জলি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এবার আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছেন মামলাকারী অজয় কুমার দে’র আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mohua Moitra) থেকে নুসরত জাহান (Nusrat Jahan) কিংবা চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। শনিবার অষ্টমীর সকালে অনেককেই মণ্ডপে প্রবেশ করে অঞ্জলি দিতে দেখা গিয়েছে। আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ সকলের মেনে চলা উচিত। তাছাড়া কেউ যদি জনপ্রতিনিধি হন, নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্বটা আরও বেড়ে যায়। আমরা সবটাই নজরে রাখছি। যাঁরাই নির্দেশ অমান্য করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
[আরও পড়ুন: করোনা কেড়েছে মেয়ের প্রাণ, দেহ আগলে রাতভর বসে রইলেন সন্তানহারা বৃদ্ধ বাবা]
এদিন সকালে সুরুচি সংঘের পূজামণ্ডপে অঞ্জলি দিতে দেখা যায় অভিনেত্রী তথা সাংসদ নুসরত জাহান ও তাঁর স্বামী নিখিল জৈনকে। এছাড়াও মণ্ডপে অঞ্জলি দেন চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী মিথিলা। মণ্ডপে তাঁদের ঢাকের তালে নাচতেও দেখা যায়। এছাড়াও মণ্ডপে প্রবেশ করে অঞ্জলি দিয়েছেন আরেক সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। সব্যসাচী বাবুর মতে, ”নুসরত জাহান বা মহুয়া মৈত্র – যে কেউ অঞ্জলি দিতেই পারেন যদি তিনি পুজো উদ্যোক্তা হন বা সদস্য হন। কিন্তু আমরা যতদূর জানতে পেরেছি নুসরত জাহান ওই এলাকার বাসিন্দা নন। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাব এবং আইনি নোটিস পাঠাব। তাছাড়া মহুয়া মৈত্রর কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। তিনি একাধিক সাংবিধানিক মামলায় নিজে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি আইন মানবেন, মানুষ এটাই আশা করে।”
[আরও পড়ুন: শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বাড়িতে ধনকড়, চলল রাজনৈতিক আলোচনা]
যদিও নুসরাতের তরফে তাঁর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে নুসরত তিন বছর আগে থেকেই সুরুচি সংঘের সদস্য। সেক্ষেত্রে তিনি সেখানে অঞ্জলি দিতে গিয়ে কিছু ভুল করেননি। এক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘিত হয়নি। নুসরতের মতোই চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় (Srijit Mukherjee) ও সুরুচি সংঘের (Suruchi Sangha) সদস্য বলে জানা গিয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে নুসরতের স্বামী নিখিল জৈন ও সৃজিতের স্ত্রী মিথিলাকে নিয়ে। মিথিলা বাংলাদেশের নাগরিক। নিখিল জৈন সুরুচি সংঘের সদস্য কি না, সে ব্যাপারে অবশ্য কিছু জানাননি নুসরতের মুখপাত্র। সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল তা কার্যকরী করতে কলকাতা পুলিশ যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের তরফে সেভাবে ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। একাধিক অভিযোগ জমা পড়ছে। তিনি বলেন, “আমরা সবটা নজরে রাখছি। আদালত পুলিশকে নির্দেশ কার্যকরী করতে বলেছিল। আমরা পুলিশকে বিষয়টা জানাচ্ছি।”তবে কৃষ্ণনগরে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর তরফে এ ব্যাপারে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে স্পষ্ট জানিয়েছিল, মণ্ডপ বা নো এন্ট্রি জোনে পুজো উদ্যোক্তা, পুরোহিত ও ঢাকিরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। পুজো উদ্যোক্তাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে সংখ্যা নির্ধারিত করে দিয়েছিল আদালত। বড় পুজোর ক্ষেত্রে একসঙ্গে ৪৫ এবং ছোট পুজোর ক্ষেত্রে একসঙ্গে ১৫ জনের প্রবেশের অনুমতি ছিল। এবং কারা, কতদিন প্রবেশ করবেন সেই সংক্রান্ত তালিকা সকাল আটটার মধ্যে মণ্ডপে ঝোলানোর নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। আদালতের নির্দেশ মানা হয়েছে কিনা লক্ষ্মীপুজোর পর রাজ্য পুলিশের ডিজিকে রিপোর্ট দিয়ে তা জানাতে হবে।