সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতির সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করলেন জনপ্রিয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া। সোমবার সকালে টুইট করে নিজেই সে কথা জানালেন। মাইক্রো ব্লগিং সাইটে তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমি আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। আমি আর ভারতের কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই যুক্ত নই।’
[গোর্খাল্যান্ড চাই, বাইচুংয়ের সওয়ালে বিতর্ক]
এমনিতেই বেশ কয়েকদিন ধরেই দলের সঙ্গে বাইচুংয়ের একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে দলবিরোধী মন্তব্য করে শীর্ষ নেতাদের রোষের মুখে পড়েছিলেন। তার উপর রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন। তৃণমূলেরই এক মহিলা বিধায়কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বাইচুংয়ের মন্তব্য তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে শেষ পেরেক পুঁতে দেয়। দলীয় কোনও কর্মসূচিতেই ইদানীং তাঁকে আর দেখা যেত না। দলের শীর্ষ নেতারা যথেষ্ট বিরক্ত ছিলেন তাঁর উপর।
তৃণমূল সূত্রে খবর, বাইচুং যে দল ছাড়ছেন সে কথা তিনি আগেই দলকে জানিয়েছিলেন। ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন সিকিমের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার। দল অনুমতিও দেয়। তাই এক্ষেত্রে মনোমালিন্যের কোনও বিষয় নেই বলেই জানাচ্ছে তৃণমূল। প্রায় এক মাস আগেই বাইচুং পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন দলকে। দলের কাছে অব্যাহতি চেয়েছিলেন তিনি। অনুমতি নিয়েই দল ছাড়ায় আজ তৃণমূল এই ঘটনায় কোনও বিবৃতি জারি করছে না। তবে দলের সঙ্গে তাঁর যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল পাহাড়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, সে কথা দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়।
[কাশ্মীরের মজিদকে ফুটবলে ফেরাতে হাত বাড়ালেন বাইচুং]
সূত্রের খবর, সিকিমের শাসক দল সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(এসডিএফ) সুপ্রিমো, মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা একরকম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সিকিম থেকে এনডিএ জোটের শরিক এডিএফের প্রার্থী হিসাবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন বাইচুং। যদিও তাঁর রাজনৈতিক গ্রাফ এমন কিছুই আহামরি নয়। ২০১৪-য় লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং থেকে এবং ২০১৬-য় বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালেও দু’বারই পরাজিত হন। সেই বাইচুংই এবার তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে এসডিএফের সমর্থনে সংসদে যেতে চাইছেন। সিকিম থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে রাজ্যসভার ভোট ২৩ মার্চ। যে ৫৮টি আসনে ভোট হবে সেখানে সিকিমের কোনও আসন নেই। সেক্ষেত্রে পরে খালি হলে অবশ্য আলাদা কথা।
গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বাইচুং বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই পৃথক গোর্খাল্যান্ড হোক।’ দার্জিলিং ও কালিম্পং কোনওদিনই পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল না। জিটিএর মতোই আন্দোলনের ফলে এক না এক সময় রাজ্য সরকার পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে মেনে নেবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি।’ বাইচুং জানান, দীর্ঘ তিন দশক পাহাড়ের মানুষের এই দাবির সঙ্গে রাজ্য সরকারের অনেক আমলা, শাসক দলের অনেক শীর্ষ নেতারও মত রয়েছে। কিন্তু, তৃণমূলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেও গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মমতার নীতি বাইচুং সমর্থন করছেন না বলেও সাফ জানিয়েছিলেন তিনি।
[লোকসভা ভোটে মমতার পাশেই মোর্চা, পাহাড়ে বিপাকে বিজেপি]
এদিন পদত্যাগের কথা ঘোষণা করার পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণই দেখছেন বিশ্লেষকরা। সিকিমে গিয়ে নির্বাচনে লড়তে পারেন তিনি। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে পাহাড় উত্তাল হওয়ার সময় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ্যে চলে আসে। বাইচুং বলেন, গোর্খাল্যান্ড আদায়ে কীভাবে এগোনো উচিত তা নিয়ে চামলিংয়ের পরামর্শ মিললে আন্দোলনকারী দিশা পাবেন। গোর্খাল্যান্ড পেতে সিকিমের দুই সাংসদ সংসদে সরব হলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রাক্তন এই ফুটবলার। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত একদিনে নেননি বাইচুং। বরং বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুঁটি সাজাচ্ছিলেন। আজ দান ফেললেন!
The post আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল ছাড়লেন বাইচুং ভুটিয়া appeared first on Sangbad Pratidin.