অরূপ বসাক, মালবাজার: চিতার উপদ্রবে দৈনন্দিন জীবন কাটানো প্রায় লাটে উঠেছিল। এই গৃহস্থের বাড়ির গোয়াল থেকে বাছুর খোয়া যায় তো ওই বৃদ্ধার পোষ মানা ছাগল উধাও হয়ে যায়। দিনরাত চিতার উপদ্রবে দিশেহারা মালবাজার মহকুমার ক্রান্তি মালহাটি চা-বাগানের শ্রমিকরা। সন্ধ্যা নামলেই তাই শ্রমিক মহল্লার বাসিন্দারা আতঙ্কের প্রহর গুনতেন। এই বোধহয় কার গোয়াল খালি হল। হাঁস-মুরগি ফুরোলে যে মালিককে খাওয়ার জন্য থাবা বাড়াবে চিতা, তা জানাই ছিল ভার্মা লাইনের শ্রমিকদের। তাই প্রাণে বাঁচতে মহল্লার প্রত্যেক বাড়ির উঠোনেই পাতা হয়েছিল ফাঁসজাল। একবার যদি ভুল করেও চিতা বাবাজি সেই ফাঁসে ভোলে, তাহলেই কেল্লা ফতে। একেবারে হাতেনাতে প্রমাণ পেলেন ভার্মা লাইনের বাসিন্দা কৈলাস মাহালি। রবিবার ভোররাতে তাঁর উঠোনে পাতা ফাঁসজালে ধরা পড়ল প্রমাণ সাইজের চিতা।
গৃহস্থের হাঁস মুরগি খেতে আসা শিয়ালকে ফাঁদে ফেলার ফাঁসজালে যে চিতার পা আটকাবে কেই বা জানত। যাই হোক ভোররাতে চিতার হুংকার শুনে কৈলাসবাবু উত্তেজনায় ঘর ছেড়ে উঠোনে নামতেই চক্ষু চড়কগাছ। জাল কেটে বেরিয়ে আসার জন্য ততক্ষণে ছটফট শুরু করে দিয়েছে চিতা। মাঝেমাঝে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকেও দেখছে। সকাল হতেই ভার্মা লাইনের গোটা শ্রমিক মহল্লা কৈলাস মাহালির বাড়ির উঠোন ভিড় করে। মালবাজার ও কাঠামবাড়ি রেঞ্জের বনকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। সকাল সকালই দুই জায়গা থেকে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ওই বনকর্মীরাই সঙ্গে করে জাল নিয়ে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তার খাতিরে ফাঁসজালের উপরেই তা চাপানো হয়। পরে গরুমারা অভয়ারণ্য থেকে বনকর্মীদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ঘুমপাড়ানি গুলি করে চিতাকে নিস্তেজ করে দেওয়া হয়। তারপর বনকর্মীদের দলটি কৈলাস মাহালির উঠোন থেকে ঘুমন্ত চিতাকে নিয়ে গরুমারার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। স্বস্তির শ্বাস ফেলে শ্রমিক মহল্লা।
[শেষ ইচ্ছে, পথশিশুদের নিয়ে মৃত স্ত্রীর জন্মদিন পালন করলেন স্বামী]
এনিয়ে কৈলাস মাহালি বলেন, ‘চিতার অত্যাচারে রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে গিয়েছেল। প্রতিদিনই হাঁস-মুরগি নিয়ে যেত। সুযোগ পেলে বাছুর, ছাগলও বাদ দিত না। এরকম চলতে থাকলে যেকোনও সময় বাড়ির মানুষগুলোই চিতার পেটে চলে যাবে। তাই উঠোনে ফাঁসজাল পেতে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথমদিনই যে সে ফাঁদে পড়ে আমাদের নিশ্চিন্ত করবে তা ভাবতে পারিনি।’ কাঠামবাড়ি বনদপ্তরের রেঞ্জার সুদীপ্ত সরকার জানান, চিতা এই প্রথম ফাঁস জালে ধরা পড়ল। শ্রমিক মহল্লা থেকে চিতাটিকে উদ্ধার করে লাটাগুড়ি রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসা চলছে। পরে সুস্থ হলে গরুমারায় ছেড়ে দেওয়া হব।
[অভিনব কেপমারি, কথায় ভুলিয়ে প্রৌঢ়ার ৯০ হাজারের গয়না লুট]
The post OMG! গৃহস্থের পাতা ফাঁদে বন্দি চিতা! কী হল তারপর? appeared first on Sangbad Pratidin.