স্টাফ রিপোর্টার: লগ্নভ্রষ্টা হলেন না কনে। আর কোনওক্রমে ট্রেন পেয়ে ঘাম ছাড়ল হবু বরের। নিশ্চিন্ত যাত্রা বরযাত্রীদেরও। হবে না কেন? খোদ রেলমন্ত্রী যে বদান্যতা দেখিয়েছেন! তঁার উদে্যাগ ও সৌজনে্যই এ যাত্রায় বিয়েটা হতে পারল! বস্তুত, ট্রেন দঁাড় করিয়ে কনের কাছে বরকে যথাসময়ে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো। শুক্রবার রেলের এই অভিনব ‘বিয়ে-বান্ধব’ সিদ্ধান্তে শনিবার যথাসময়ে গুয়াহাটিতে চার হাত এক হল নির্বিঘ্নে।
আসলে শুক্রবার এমনিতেই তিন ঘণ্টা লেটে চলছিল হাওড়াগামী গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস। আর ওই ট্রেনেই হাওড়ায় আসছিলেন পাত্র-সহ বরযাত্রী। হাওড়া এসে তঁাদের চাপার কথা সরাইঘাট এক্সপ্রেসে। গন্তব্য গুয়াহাটি। সেখানেই যে কনের বাড়ি। হাওড়া থেকে সরাইঘাট এক্সপ্রেসের নির্ধারিত সময় বিকেল ৪.০৫। অথচ গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস পথে দেরি করায় সঁাতরাগাছির কাছে আসে সাড়ে তিনটে নাগাদ। পাত্র চন্দ্রশেখর বাঘ ও ৩৫ জন বরযাত্রী বেজায় চিন্তিত হয়ে পড়েন। হাওড়া পৌঁছবেন কী উপায়ে। সঁাতরাগাছি থেকে হাওড়া সিঙ্গল লাইন হওয়ায় টিকিয়াপাড়া থেকে হাওড়া আসতে অনেকটা বাড়তি সময় লাগে। ফলে সরাইঘাট এক্সপ্রেস হাতের নাগালে থাকবে না বলে তঁারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
পাত্র মুম্বইয়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দ্রুত রেলমন্ত্রীকে বিষয়টা জানিয়ে টুইট করেন তিনি। রেলমন্ত্রীও বিষয়টি অনুভব করে হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জীব কুমারকে সহযোগিতা করতে বলেন। মাঠে নামেন সঞ্জীব। খড়গপুরের সিনিয়র ডিওএম-কে লাইন ক্লিয়ার রেখে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসকে হাওড়ায় তড়িঘড়ি ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। এর পরই এক লাইন হওয়ায় আপের ট্রেন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রেখে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসকে সরাসরি হাওড়া আনা হয়।
বিকেল ৩.৫৫ মিনিটে ট্রেনটি হাওড়া নিউ কমপ্লেক্সে এসে পৌঁছয়। সেখান থেকে ওল্ড কমপ্লেক্সে পৌঁছনোর জন্য হাওড়ার সিনিয়র ডিসিএম রাহুল রঞ্জনের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল গ্রিন করিডর। পঁাচটি ব্যাটারি চালিত গাড়ি আগে থেকেই হাজির ছিল সংশ্লিষ্ট কামরার সামনে। তড়িঘড়ি তাতে বর-সহ বরযাত্রীদের তুলে নিয়ে আসা হয় ৮ নম্বর প্লাটফর্মে। যেখান থেকে বিকেল ৪.০৫ মিনিটে ছাড়ার কথা সরাইঘাট এক্সপ্রেসের। বরযাত্রী নিয়ে সরাইঘাট এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়তে পঁাচ-সাত মিনিট দেরি করে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র ডিসিএম রাহুল রঞ্জন। রেলমন্ত্রী-সহ রেল আধিকারিকদের এই মানবিকতায় বেজায় খুশি বরযাত্রীরা। আধিকারিকদের বিয়েতে আমন্ত্রণও জানিয়ে যান তঁারা। শনিবার যথাসময়ে চন্দ্রশেখরের বিয়ে হয় নির্বিঘ্নে। গুয়াহাটি থেকে এমটেক পড়ার সময় পাত্রীর সঙ্গে তার আলাপ। সেখান থেকে ভালোবাসা ও পরিণয়। যা একেবারে নির্বিঘ্নে হতে পেরেছে রেলমন্ত্রী ও রেলকর্তাদের সহযোগিতার জন্য, তঁাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন চন্দ্রশেখর।