নন্দন দত্ত, সিউড়ি: শহরের কোলাহল নেই, ডিজে নেই। সুরুলের জমিদার বাড়িতে নিরিবিলি পরিবেশে পুরনো রীতি মেনে আজও চলে উমা (Durga Puja 2022) আরাধনা। শামিল হন বহু মানুষ। বর্তমানে ঝাঁ চকচকে পুজোর মাঝে এই পুজো যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, সামনে থামযুক্ত নাটমন্দির, নানারঙের কাঁচের ফানুস আর বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি মনে করিয়ে দেয় সাবেকি ঐতিহ্য আর রাজকীয় জৌলুসের কথা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলার বহু পুজোকে আধুনিকতা গ্রাস করলেও বীরভূম সুরুলের সরকার বাড়ির পুজোর পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘ ২৮৮ বছর ধরে একইভাবে পুজিতা হচ্ছেন দেবী। আজও পুজোয় মিশে মাটির গন্ধ, শিকড়ের টান আর আভিজাত্য। এখনও ডাকের সাজে সাজানো হয় সাবেকি প্রতিমা। পরানো হয় সোনা ও রূপোর গয়না। প্রতিমার রঙ তপ্তকাঞ্চন। চালচিত্রে আঁকা থাকে শিব ও দুর্গার বিয়ের দৃশ্য। প্রতিমার সাবেকি রূপটি আজও অপরিবর্তিত রয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাজ-শুভশ্রীর বাচ্চা ‘স্মার্ট’, যুবানের প্রশংসা করে সমালোচকদের একহাত নিলেন মমতা]
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বর্ধমানের নীলপুরের ঘোষবাড়ির ছেলে ভরতচন্দ্র সস্ত্রীক চলে আসেন সুরুলে। তাঁর গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে। সুরুল ছিল বৈষ্ণব ধর্মগুরুর শ্রীপাট। ভরতচন্দ্র গুরুদেবের শ্রীপাট ছেড়ে আর ফিরে যাননি বর্ধমানে। তাঁর পুত্র কৃষ্ণহরি ও তাঁর ছেলেরা সেই সময় ফরাসি ও ইংরেজ কুঠিয়ালদের সঙ্গে ব্যবসা করে পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি করেন। সুরুল রাজবাড়ির সঙ্গে ঠাকুর বাড়ির সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সরকার বাড়ি গিয়ে বেশ কিছুদিন সময় কাটিয়েছেন। এছাড়াও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বেশ কিছু জমি রাজপরিবার তরফ থেকে প্রদান করা হয়। বহু জমিদারবাড়ির পুজোর ঠাটবাট আজ ফিকে! ব্যতিক্রম সুরুল সরকার বাড়ি। অর্থ বা পারিবারিক সমস্যা কোনও দিন পুজোয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি।
এখনও সপ্তমীর সকালে পালকি, নহবত আর জমিদারী মাধুর্য্যে ঘট ভরতে যায় সুরুলের দুই তরফের পুজো উদ্যোক্তারা। ফিরে এসে নাড়ুর হরিলুঠ করেন বাড়ির এয়োস্ত্রীরা। তখন নিচে আঁচল পেতে দাঁড়ান এলাকার মায়েরা। আনন্দ মেতে ওঠেন সকলে।