কৃশানু মজুমদার: ওপারের ছেলে এবার এপারের দলে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সংসারে বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার লিটন দাস (Litton Das)।
আইপিএলের (IPL) বল গড়ানোর এখনও বেশ কিছু সময় বাকি। তার আগে বঙ্গবন্ধুর দেশ থেকে লিটন দাস-শাকিব আল হাসানদের ‘গুরু’ নাজমুল আবেদিন ফাহিমের পরামর্শ, ”লিটন দাস নিজে একজন দুর্দান্ত উইকেট কিপার। উইকেট কিপার-ব্যাটার হিসেবে কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) লিটনকে ব্যবহার করলে ভাল করবে।”
[আরও পড়ুন: সই করা জার্সি উপহার দিয়েছেন মেসি, আনন্দে আত্মহারা ধোনিকন্যা জিভা]
লিটন দাসের নাম উচ্চারিত হলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের স্মৃতি। তাঁর মারমুখী ইনিংস ভারতকে একসময়ে প্রবল চাপে ফেলে দিয়েছিল। ভারতীয় বোলারদের আক্রমণের রাস্তা নেন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন। ম্যাচের ভরকেন্দ্র দ্রুত হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। ঠিক সেই সময়ে বৃষ্টি ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দেয়। বরুণদেবতার জন্য ম্যাচ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। খেলা শুরু হওয়ার পরে রান আউট হন লিটন দাস। ভারত ম্যাচের উপরে জাঁকিয়ে বসে। বাংলাদেশ হেরে গেলেও লিটনের ২৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। সদ্যই ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ খেলে উঠেছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিত শর্মাদের বিরুদ্ধে ওরকম বিস্ফোরক ইনিংসই হয়তো আইপিএলের নিলামে অনুঘটকের কাজ করেছে। কেকেআর দলে নেয় লিটনকে। বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ”এক্সাইটেড।” গুরু ফাহিম বলছেন, ”আইপিএলে লিটনের সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুবই ভাল খবর। উঠতি ক্রিকেটার যাঁরা, তাঁরাও লিটনকে দেখে উৎসাহী হবেন। বাংলাদেশের আরও কয়েকজন আইপিএলে খেলার সুযোগ পেলে তা দেশের ক্রিকেটের জন্যই ভাল হবে। লিটনের জন্যও এটা দারুণ ইতিবাচক দিক। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের ভিড় আইপিএলে। এরকম ধরনের টুর্নামেন্টে একজন ক্রিকেটারকে পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষা দিতে দিতেই সে অনেক কিছু শিখে নেয়। পরিণত হয়ে ওঠে। তা পরবর্তীতে কাজে দেয়।”
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সম্পর্ক দুই দশকের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কাজ করেছেন প্রায় পনেরো বছর। বাংলাদেশ (Bangladesh) ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। সেই কারণেই অভিজ্ঞ ফাহিম-স্যর বলছেন, ”শাকিব ও লিটন কলকাতা নাইট রাইডার্সে ডাক পাওয়ায় বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ সমর্থন করবে কেকেআর-কে। কেকেআরের প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের শুভেচ্ছা, ভালবাসা বর্ষিত হবে।”
শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লিটনের ব্যাট চলেছে তা নয়। এর আগে ‘টিম ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধেও তাঁর ব্যাট কথা বলেছে। ২০১৮-র এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লিটন। ম্যাচ সেরার সম্মান পেয়েছিলেন তিনি। যদিও ম্যাচটি হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। তাঁর ও শাকিবের ১৮৯ রানের পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে দুরন্ত এক জয় এনে দিয়েছিল। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হিসেবে লিটন দাসের নাম রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথমে পাক অধিনায়ক বাবর আজম। এতকিছুর পরেও আইপিএলের নিলামে লিটনের দর উঠেছে মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্ক কি তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করছে? নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলছেন, ”সেটা করছে না। টাকার অঙ্ক ওর নামের সঙ্গে মোটেও মানানসই নয়। কিন্তু আমি একে বলব ইনভেস্টমেন্ট। লিটনকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে। পরের বছর হয়তো এর সুবিধা পাওয়া যাবে।” যদিও বাংলাদেশ তারকাদের মেগাটুর্নামেন্টে কতদিন পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখন থেকেই জোর চর্চা। তবে এখন থেকেই আইপিএল নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছে পদ্মাপাড়।
টি-টোয়েন্টি এখন বিশ্বের জনপ্রিয় ফরম্যাটও বটে। ব্যাটাররা দ্রুত রান তোলার জন্য হরেকরকমের শট খেলেন। আর এই ধরনের শট দেখে বিশুদ্ধবাদীরা ‘গেল গেল’ রব তোলেন। ফাহিম এই দলের নন। তিনি বলছেন, ”শুধুমাত্র ধুমধারাক্কা শট খেলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়া যায় না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেরও নিজস্ব একটা ব্যাকরণ রয়েছে। ডেভিড ওয়ার্নারও তো টি-টোয়েন্টি খেলে। শততম টেস্টে ডাবল হান্ড্রেড করল। লিটন দাস একজন ধ্রুপদী খেলোয়াড়। কোন সময়ে ইনিংসে গতি তুলতে হবে, ফিল্ডারের অবস্থান দেখে কীভাবে শট খেলতে হবে, তা ওর নখদর্পণে। আমি বলব, আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে লিটনের খেলা জরুরি।”
মাঝে আর কয়েকদিনের অপেক্ষা। তার পরই শাহরুখ খানের দল মাঠে নামবে। গ্যালারিতে বাজবে, ”করব, লড়ব, জিতব রে।” সেই সুর বাজবে ওপারেও। ক্রিকেট মিলিয়ে দেবে ওপার-এপারকে।