shono
Advertisement

Breaking News

পায়ের ব্যথায় কাবু? হাড়ের ক্ষয় নয়তো? পুষ্টিকর খাবার খান, পরামর্শ চিকিৎসকের

হাড় বা অস্থিই আমাদের শরীরের কাঠামো।
Posted: 09:15 PM Jul 21, 2023Updated: 09:15 PM Jul 21, 2023

ডা. আনন্দকিশোর পাল: ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘টু সাকসিড ইন লাইফ, ইউ নিড থ্রি থিংস: আ উইশবোন, আ ব‌্যাকবোন, আ ফানি বোন।’অথচ সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল নিয়ে আমাদের যতটা মাথাব‌্যথা, হাড় নিয়েও কি ততটা মাথাব‌্যথা রয়েছে? কিন্তু এই হাড় বা অস্থিই তো আমাদের শরীরের কাঠামো। শরীরের সব ভার সহ্য করার ভার এই অস্থি বা হাড়ের এবং পেশির উপর। শুধু তাই নয়, এই অস্থি আর পেশিই আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকেও রক্ষা করে। তাই হাড় ও পেশি সচল থাকলেই জীবন আমাদের গতিশীল থাকবে। তাই সুস্থ সবল থাকতে হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাটা খুব দরকার।

Advertisement

হাড়ের অন্য আরেকটি সমস্যা হলো ‘অস্টিও আর্থ্রাইটিস’।

কিন্তু চিন্তা বাড়ছে
হাড়ের সমস্যাগুলোর অন‌্যতম ‘অস্টিওপোরোসিস’। এই অসুখে হাড় ও পেশি দুর্বল হয়ে ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সামান‌্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যায় বা চিড় ধরে। যা ধীরে ধীরে শরীরের মূল বা প্রধান অস্থিকে নষ্ট করে। যার অত‌্যন্ত পরিচিত উদাহরণ, স্লিপ ডিস্ক। এই রোগে শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙে মারাত্মক যন্ত্রণা শুরু হয়। আবার অস্টিওপোরোসিসের কারণে পক্ষাঘাতের শিকার হন বহু মানুষ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার শরীরের নিম্ন অংশ খুব দুর্বল হয়ে যায়। অস্টিওপোরোসিস অনেক ক্ষেত্রে হাতের অস্থি ও ফিমার বোনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপন বা ‘জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের’-ও প্রয়োজন পড়ে। হাড়ের অন্য আরেকটি সমস্যা হলো ‘অস্টিও আর্থ্রাইটিস’। এক্ষেত্রেও ঠিক মতো চিকিৎসা না করা হলে সমস্যা বেশ গুরুতর আকার নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র মুক্তির উপায়, ব‌্যয়বহুল ‘টোট্যাল জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট’। 

[আরও পড়ুন: প্রস্টেট ক্যানসার মানেই অপারেশন নয়, রেডিয়েশনেও এর নিরাময় সম্ভব, জানালেন বিশেষজ্ঞ]

ওষুধের মতোই কিছু খাবার
দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬০ শতাংশ চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তির অস্থিক্ষয় বা ভঙ্গুরতার পিছনে ভুল ফুড হ্যাবিটই দায়ী। তাই সঠিক ওষুধের মতোই জরুরি রোজকার সঠিক খাদ‌্যতালিকা নির্বাচন। হাড়ের মূল উপাদান ও শক্তি হল ক্যালশিয়াম (Calcium)। এটি সরাসরি অস্থিমজ্জায় প্রবেশ করে শক্তপোক্ত করে হাড়কে। ক্যালশিয়াম দ্রবীভূত হতে ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামের (Magnesium) সাহায‌্য প্রয়োজন। একইভাবে পেশিকে শক্তিশালী রাখতেও ভিটামিন সি, ডি, কে, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন দরকার।
এখন প্রশ্ন হল, এগুলো আসবে কোথা থেকে?

ক্যালশিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার।

ক্যালশিয়ামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার। যেমন, চিজ, ছানা, টকদই ইত্যাদি। এছাড়া সবুজ শাক-সবজিতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম। তাই ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, সোয়াবিন, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, গমজাতীয় খাবার বা রুটি, টফু, সার্ডিন মাছ খুবই কার্যকরী। নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রে সোয়াবিন, ওটস, জল ঢালা ভাতের জল, রুটি, ডাল, টফু, বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস যেমন অ্যাপ্রিকট ও ডুমুর ইত্যাদি উপকারী। ভিটামিন ডি (Vitamin D) কিন্তু আমাদের প্রকৃতিতেই রয়েছে। সূর্যরশ্মিই এর মূল উৎস। মুখ, চোখ ও মাথা ঢেকে নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট রোদে থাকুন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে রোদে ভিটামিন ডি যথার্থ পরিমাণে মেলে। এছাড়া দুধ, ডিম, বিফ লিভার, সোয়া ড্রিংক্স ও বিভিন্ন দানাশস্যে ভিটামিন ডি রয়েছে। আসলে ভিটামিন ডি ক্যালশিয়ামকে হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে ও ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

সাধারণত মিষ্টি আলুতে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে।

এবার আসা যাক ম্যাগনেশিয়ামের প্রসঙ্গে। সাধারণত মিষ্টি আলুতে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কিন্তু মিষ্টি আলুর সঙ্গে আরও মিষ্টি বা নুন যোগ করে রান্না করলেই কেলেঙ্কারি! তখন এর যাবতীয় উপকারী গুণ নষ্ট হয়ে যায়। কলা ও ডাবের জলেও পটাশিয়াম রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডুমুর, পালংশাক, কিশমিশ, কমলালেবুতে রয়েছে পটাশিয়াম। অন্য নানা ফলের মধ্যে স্ট্রবেরি এবং পেঁপেতে থাকা ভিটামিন সি পেশির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
স্বভাবের দোষে আজকের দিনে অধিকাংশ শিশুই দুধ খেতে চায় না। সারাদিন ঘরে বসেই কাটছে শৈশব, বাইরে খেলতে যাওয়ার ব্যাপারটা নেই। এই করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে অস্থিজনিত অসুখকে ডেকে আনছে।

বেশি চা-কফি পান করলে অন্ত্রে ক্যালশিয়াম ঠিকমতো দ্রবীভূত হয় না।

অতিরিক্ত মেদ জমলেও যেমন চিন্তার তেমনই শরীর দুর্বল হয়ে খুব রোগা হয়ে গেলেও তা অস্থিকে বিপর্যস্ত করে। অনেক সময় কমবয়সি মেয়েদের অ্যামিনোরিয়া বা মাসিক বন্ধ হয়েও অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। আরও একটা অতি ক্ষতিকারক অভ‌্যাস কোল্ডড্রিংক পান। বিশেষত দুগ্ধজাতীয় বা চিজ সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানীয় পান করলে বিপজ্জনক। আবার বেশি চা-কফি বা অ্যালকোহল পান করলেও কিন্তু অন্ত্রে ক্যালশিয়াম ঠিকমতো দ্রবীভূত হয় না। ধীরে ধীরে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। অনেকেরই জিনগত কারণে উৎসেচকের অভাব দেখা দেয়। এই অবস্থায় যদি তারা বেশি প্রোটিন যেমন রেড মিট বা পাঁঠার মাংস, পাকা মাছ, মিষ্টি, মদ‌্যপান করে তাহলে সন্ধিতে একসঙ্গে ব্যথা হতে পারে। গাঁট ফুলতে শুরু করে। বিশেষত ৪০ ঊর্ধ্ব পুরুষ ও মেনোপজ হয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাই কী খাচ্ছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনওই অন্যের মর্জিতে খাবেন না।
কথায় আছে, আপ রুচি খানা! তাই নিজে জেনে বুঝে খান। সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ‌্য তালিকা বেছে নিন।না হলে হাড়ে দুব্বো ঘাস গজানোটা শুধু সময়ের অপেক্ষা!

অধ্যাপক ডা. আনন্দকিশোর পাল জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান।

[আরও পড়ুন: বর্ষাকালে রোজ রোজ ভাজাভুজি খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো! জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের মত]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement