shono
Advertisement
Durga Puja 2024

দুর্গাপুজো মানে মাছ-ময়ূর-পাখি-শঙ্খ, ছাঁচের মিষ্টি তৈরির সেই দুপুর

চৌকো, ত্রিভূজ, গোলাকার, আয়তকার, কত রকমের সন্দেশ।
Published By: Kishore GhoshPosted: 06:58 PM Sep 25, 2024Updated: 07:41 PM Sep 25, 2024

শুভঙ্কর দে: আমাদের ছেলেবেলায় দুর্গাপুজো ছিল একদম সাদামাটা। আজকের মতো এত ঝকমারি কৃত্রিম আলোর ঝলকানি যেমন ছিল না, তেমন ছিল না রেস্তরাঁতে বিদেশী খাবার খাওয়ার লোভ। তবে লোভ ছিল একটা, সেটা পুজোর আগে আগে দিদা, মামীদের হাতের তৈরি নাড়ুর উপর। তখন প্রকৃতির মধ্যে লক্ষ্য করতাম ভাদ্রের বাদলা দিনের গুমোট সরে গিয়ে কালো মেঘ ঢাকা মনমরা আকাশটা নীল রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলত। গ্রামের বাড়ির প্রাচীরগুলোতে গোবর জল দিয়ে নিকিয়ে তার উপর সাদা চুনের প্রলেপ দিয়ে আঁকা হত ফুল, পাখির নানানরকম ছবি। আর শরতের বাতাসে ভেসে আসত ঘরে ঘরে তৈরি হওয়া হাতে গরম নাডুর গন্ধ। সেই গন্ধ মাতাল করে দিত। দেখতাম দুপুরবেলায় খাওয়া দাওয়া করে বাড়ির মেয়েরা বসে পড়ত ছাঁচের সন্দেশ, নারকেল নাড়ু তৈরি করতে।

Advertisement

আমার ছোটবেলা মামারবাড়ির গ্রামে কেটেছে। মামাবাড়িতে দিদা ও বড়মামী দুপুরে সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে অনেকগুলো নারকেল নিয়ে কুড়ানি বঁটি দিয়ে ঘসে ঘসে গুঁড়ো করত। একদিকে নারকেল কুড়া হত, আরেক দিকে বড়মামা শুদ্ধবস্ত্র পরে উনুনের ঢিমে আঁচে লোহার কড়াই বসিয়ে তাতে গুড় গরম করত। তারপর সেই গুড় ফুটে চাপ চাপ হয়ে এলে তাতে কুড়ে রাখা নারকেল ঢেলে ভালো করে খুন্তি দিয়ে মাখিয়ে মামা সেটা নামিয়ে দিত। কড়াই থেকে আসা গরম ধোঁয়ার গন্ধ আমাকে আটকে রাখতে পারত না। ইচ্ছা করত কড়াই থেকেই যেন এক একমুঠো তুলে মুখে পুরে দিই। কিন্তু দিদার নির্দেশ, একদম হাত দেওয়া যাবে না।

আগে পুজোর চারদিনের জন্য বিভিন্ন ছাঁচের মিষ্টি তৈরি করে সেটা ঠাকুরঘরে রেখে আসা হত। তারপর যা তৈরি হবে সেখান থেকে দেওয়া হত আমাদের। কী আর করা যাবে, বাধ্য ছেলের মতো তখন বসে বসে দেখতাম, কড়াই থেকে নাড়কেল-গুড় তুলে একটা ছাঁচে সুন্দর করে বসিয়ে হাতের তালু দিয়ে চাপ দেওয়া হত। মিষ্টির এত সুন্দর শিল্পকলা আমি কখনও দেখিনি। ছাঁচগুলোর প্রকারভেদ ছিল দুরকম—পোড়া মাটির ও কালো কাঠের। গঠন হত বিভিন্ন রকমের—চৌকো, ত্রিভূজ, গোলাকার, আয়তকার। প্রত্যেকটিতে থাকত খোদাই করা নকশা। কোনওটায় শঙ্খ, মাছ, প্রজাপতি। কোনওটায় ময়ূর, পাখি, ঘোড়া, হাতি ইত্যাদি। ছাঁচের মাধ্যমে এসবেরই রূপ নিত সন্দেশ। গরম গরম ছাঁচের মিষ্টি খেতে খেতে চোখ বুজে আসত। কিন্তু একদিনে বেশি খাওয়া যাবে না, তাই মনটা আঁকুপাঁকু করত। চুপি চুপি লক্ষ্য করতাম, বড়রা থালায় তেল বুলিয়ে মিষ্টি রাখত। একদিন শুকিয়ে নিত। তারপর সেগুলো একটা কৌটোতে ভরে রাখত।

আমার মাসির ছেলে প্রতিবছর পুজোর সময় মামাবাড়ি আসত। আমরা তখন দুজনে মিলে বড়দের চোখ এড়িয়ে সেই কৌটোগুলো খুঁজে চার পাঁচটা তুলে নিয়েই মারতাম দৌড়। সোজা এসে পাড়ার মণ্ডপে। মণ্ডপের নিচে দাঁড়িয়ে একদিকে মুখ চলত, আর একদিকে উপভোগ করতাম ঢাকের আওয়াজ। তাকিয়ে থাকতাম ভূবন ভোলানো দুগ্গা প্রতিমার মুখের দিকে। আজ কত বছর হয়ে গেল, গ্রামের সেই বাড়িও নেই, ছাঁচের সেই মিষ্টি করার দুপুরগুলোও নেই!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আগে পুজোর চারদিনের জন্য বিভিন্ন ছাঁচের মিষ্টি তৈরি করে সেটা ঠাকুরঘরে রেখে আসা হত।
  • আমার মাসির ছেলে প্রতিবছর পুজোর সময় মামাবাড়ি আসত।
Advertisement