shono
Advertisement

প্রস্রাবের বেগে বেসামাল? জেনে নিন রোগমুক্তির উপায়

দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক অস্বস্তি কারণ হওয়ার আগেই খুঁজে নিন রোগমুক্তির দাওয়াই।
Published By: Sayani SenPosted: 06:29 PM Feb 03, 2025Updated: 06:29 PM Feb 03, 2025

পুরুষ-মহিলা সকলেরই যে কোনও বয়সে হতে পারে প্রস্রাবের বেগ বেসামাল। এটি দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক অস্বস্তি তৈরি করে। অসুখ এড়িয়ে না গিয়ে বর্তমানে নানা রকমের চিকিৎসা আছে, সেই পথ অবলম্বন করাই শ্রেয়। কখন, কী করলে রোগ সারে সে সব নিয়েই কথা বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের ইউরোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শৌভিক চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন সুমিত রায়।

Advertisement

মনে হল হয়ে গিয়েছে, কিন্তু বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার জামাটা ভিজে যায়, কিংবা একটু পরেই মনে হয় খুব জোরে পাচ্ছে। সামলাতে না পেরে আবার যেতেই হয়। অনেক সময় বেশি বয়সে শিশুদের মতো রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলার সমস্যা হতে থাকে। ঠিক ধরেছেন, প্রস্রাবের গতি নিয়ে কথা হচ্ছে। এই বেগতিক বেগ নিয়ে অনেকেই নাজেহাল, কিন্তু চিকিৎসা করানোর প্রয়োজনটাই বোঝেন না বেশিরভাগই।

কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের এই রোগ যে কোনও বয়েসেই হতে পারে। পুরুষদের মধ্যে ৫০ ঊর্ধ্বদের এই রোগ বেশি হয়। মহিলাদের মধ্যে এটা সাধারণত নর্মাল ডেলিভারি (স্বাভাবিক প্রসবের) পরে বা মেনোপজ (রজঃনিবৃত্তি) এর পরে হয়ে থাকে।

কেন হয়?
যদিও সাধারণভাবে দেখতে গেলে মূলত প্রস্রাবের দ্বারে বাধার কারণেই এই রোগের সৃষ্টি, কিন্তু সেই বাধার কারণ প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এক নয়। তবে ওভার অ্যাকটিভ ব্লাডার থেকে পুরুষ-মহিলা সকলেরই প্রস্রাব ধরে রাখতে সমস্যা হতে পারে। যদিও মহিলাদের এই সমস্যা তুলনায় বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রস্রাবের বেগ বেসামাল হয়ে যায়। অর্থাৎ খুব জোরে পেলে তা সামলাতে পারেন না অনেকেই।

পুরুষদের ক্ষেত্রে কারণ
যুবকদের ক্ষেত্রে - যদি প্রস্রাবের থলির মাংসপেশীর গঠন ঠিক না থাকে, যা জন্মগত হতে পারে। অথবা পরিপক্বতার সময় প্রস্টেটের অবস্থানের পরিবর্তনের কারণেও হতে পারে। আরও যে কারণে হয়:
ব্লাডার নেক হাই আপ (প্রস্রাবের দ্বারটা বাঁকা)
প্রাইমারি ব্লাডার নেক অবস্ট্রাকশন (প্রস্রাবের দ্বারে বাধা)
প্রস্টেটোমেগালি- ৫০ ঊর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে এইগুলি তো কারণ হতেই পারে, এছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্টেটের আকারের বৃদ্ধির জন্য এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পুরুষের চিকিৎসা
প্রথমে ওষুধের দ্বারা প্রস্রাবের দ্বারের মাংসপেশীগুলিকে সচল করার চেষ্টা করা হয়। ওষুধ দীর্ঘদিন খেতে হতে পারে। সবার ক্ষেত্রেই, মূলত কমবয়সিদের, এই ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আবার এই সমস্যা থেকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন হয় অনেকের। সে ক্ষেত্রেও বিশেষ ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।

কখন অপারেশন
ওষুধে কাজ না হলে তখন অস্ত্রোপচার করতে হয়ে। ব্লাডার নেক হাই আপ হলে এন্ডোস্কোপি দ্বারা ব্লাডার নেক ইন্সিশন করা সম্ভব হয়। কিন্তু যদি মূত্রনালি শুকিয়ে গিয়ে থাকে তখন ইউরেথ্রোপ্লাস্টি করতে হয়ে। প্রস্টেটের আকারের বৃদ্ধি হলে সাধারণত টি ইউ আর পি (ট্রান্স ইউরেথ্রল রিসেক্সন অফ প্রস্টেট) করা হয়ে। এ ছাড়া হোলেপ (হোল্মিয়াম লেজার এনিউক্লিয়েসন অফ প্রস্টেট) পদ্ধতির মাধ্যমেও এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

এগুলি ছাড়াও এখন কিছু মিস্ট (মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট) বেরিয়েছে যা ব্যবহার করে প্রস্টেট বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে কাবু করা হচ্ছে। মূলত যাঁরা খুব বয়স্ক, নানা রোগে ভুগছেন, বা যাঁদের অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া সম্ভব নয়, তাঁদের জন্য এটা কার্যকর। মিস্টের মধ্যে দুটি প্রচলিত হল-ওয়াটার ভেপার ইনফিউশন থেরাপি (প্রস্টেটকে গলিয়ে ছোট করে দেওয়া হয়), ইউরোলিফ্ট (প্রস্টেটের ভেতরে একটা যন্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যেটা প্রস্টেটকে চেপে দেয়, যাতে সেটা আর প্রস্রাবের দ্বারে বাধা না দিতে পারে)। এ ছাড়া যাদের বয়স কম এবং ওষুধে কাজ হচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রেও মিস্ট করা ভালো।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে
কিছু অসুখের ক্ষেত্রে এবং ব্লাডার নেক ইন্সেশন বা টি ইউ আর পি করলে রেস্ট্রোগ্রেড ইজাক্যুলেশনের সমস্যা হয়, অর্থাৎ বীর্য পুরুষের লিঙ্গ দিয়ে না বেরিয়ে সেটা মূত্রথলিতে চলে যায়ে। তাই যাঁরা সন্তান জন্ম দিতে ইচ্ছুক বা বয়স্কদেরও অ্যালফুজোসিন জাতীয় ওষুধ দিতে হয় তাদের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মিস্ট করার প্রয়োজন।

মহিলাদের কারণ ও চিকিৎসা
জরায়ুর মাধ্যমে প্রসব করলে শ্রোণির (পেলভিক) মাংসপেশীগুলি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া প্রসবের পরে যোনির মধ্যে মূত্রথলি ফুলে ওঠে। অথবা জরায়ুর একটু নিচের দিকে টান থাকে, যার ফলে এই সমস্যা হতে পারে। মেনোপোজের পরে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য অনেক সময় মূত্রদ্বারটা ছোট হয়ে যায় বা মূত্রনালি শুকিয়ে যায়, যার ফলে প্রস্রাবের গতি ধরে রাখতে সমস্যা হতে পারে।

মহিলাদের সমাধান
প্রসবের পরে এই সমস্যা দেখা দিলে অ্যালফা ব্লকার ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে সেলফ ক্যাথাটারাইজেশন (নিজেকেই প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটার ঢুকিয়ে রাখতে হয়, ফলে জমে থাকা বাকি প্রস্রাব বেরিয়ে আসে) করতে হয়। রোগের প্রবণতা নির্ধারণ করে কত সময়ের অন্তরালে সেলফ ক্যাথাটারাইজেশন করতে হবে সেটা ঠিক করা হয়। মেনোপজের পরে হলে এন্ডোস্কোপি দ্বারা মুখ বা নালি বড় করে দেওয়া হয়। তার পর সেল্ফ ক্যাথাটারাইজেশন করার সঙ্গে হরমোনাল সাপোর্টও দরকার হয়। তবে খুব কম ক্ষেত্রে, বলা ভালো এক লাখে দু-এক জনের মূত্রনালি শুকিয়ে গেলে তখন বি এম জি ইউরেথ্রোপ্লাস্টি করতে হয়ে।
ওভার অ্যাকটিভ ব্লাডার হলে তার ওষুধ আবার আলাদা। কারণ দেখে সেইমতো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

সকলকে মানতে হবে
সন্ধ্যার পর কম জল পান।
ক্যাফিন জাতীয় খাবার- চা, কোল্ড ড্রিংক, চকোলেট, কফি পান বন্ধ করতে হবে।
তেল-মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
মদ্যপান করা চলবে না।

কাদের ঝুঁকি বেশি
ধূমপান করলে সমস্যা বাড়ে।
মদ্যপান ঝুঁকি বাড়ায়।
আর্টিফিশিয়াল (কৃত্রিম) চিনি খেলে সাবধান।
সেডেন্টারি লাইফস্টাইল (দিনে বেশিরভাগ সময় যাঁরা বসে কাটান)
মূত্রথলির কাছাকাছি বা মেরুদণ্ডে কোনও রকম গভীর চোট খেলে প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে।
ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মেদবহুল হলে সাবধান।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
Advertisement