স্টাফ রিপোর্টার, হাওড়া: এলাকায় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক অন করলেই মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে আলকায়দা ও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নামে দু’টি জঙ্গি সংগঠনের নাম। তবে কি পাড়ায় জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে? এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিতেই মঙ্গলবার তীব্র আতঙ্ক ছড়াল হাওড়ার জগাছার অম্বিকা কুন্ডু বাই লেনে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এদিন সন্ধেয় এলাকায় ছুটে যায় জগাছা থানার পুলিশ। তারাও মোবাইল নেটওয়ার্ক অন করে বিষয়টির তদন্ত শুরু করে।
আতঙ্কিত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এদিন পুলিশকে জানান, গত এক বছর ধরে ওই এলাকায় ওয়াই ফাই নেটওয়ার্ক অন করলেই ওই দুই জঙ্গি সংগঠনের নাম ভেসে উঠছে। বিষয়টি এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা হাওড়া সিটি পুলিশের নজরেও এনেছিলেন। কিন্তু তাও এমন ঘটনা ঘটছে বলে তাঁদের দাবি।
গত বছর নিউটাউনে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর এভাবে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে (Wi-Fi Network) জঙ্গিদের নাম ভেসে ওঠায় আতঙ্ক আরও তীব্র হয়েছে। এদিন সন্ধেয় ওয়াই-ফাইয়ে জঙ্গি নেটওর্য়াকের খবর পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের লোকজন ওই এলাকায় গেলে এলাকার বাসিন্দারা প্রথমে কেউ মুখ খুলতে চাননি। পরে এলাকায় পুলিশ আসার পর লোকজন ভিড় করতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা মুখ খোলেন।
[আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় প্রতিবাদী মিছিলে পুলিশের গুলিবৃষ্টি, মৃত অন্তত ১, জখম বহু]
কিন্তু প্রশ্ন হল এক বছরের মধ্যে পুলিশকে কেউ কিছু জানাননি কেন? এলাকার এক ব্যবসায়ী শৌভিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘নিজের এলাকায় মোবাইল বা কম্পিউটারে ওয়াই-ফাই অন করলে আশ্চর্য এক কাণ্ড ঘটছে। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সার্চ করলে আসছে দু’টি জঙ্গি সংগঠনের নাম। দেখাচ্ছে ‘আল কায়দা’ (Al-Qaeda) ও ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে’র (Indian Mujahideen) মতো দু’টি জঙ্গি সংগঠনের নামে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক রয়েছে। তবে তাতে পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে। অর্থাৎ যে কেউ ওই ওয়াই-ফাইয়ের সঙ্গে নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার সংযুক্ত করতে পারবেন না। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল, গত এক বছর ধরে এই কাণ্ড ঘটে চলেছে।’’ শৌভিকের দাবি, বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক ভাবে তিনি হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন সাইবার ক্রাইম বিভাগকেও। জঙ্গি সংগঠনের নামে নেটওয়ার্কের নাম কারা রেখেছে? এই উদ্বেগে ভুগছেন শৌভিকের মতো অনেকেই।
এলাকার আরেক বাসিন্দা অনিমেশ বসু বলেন, ‘‘এলাকা থেকে শৌভিক প্রথমে ঘটনাটি নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের ফেসবুকে পোস্ট করেন। সাইবার ক্রাইম দপ্তরকেও জানান। পরে পুলিশ কমিশনারকে মেল করেন। আমিও পুলিশকে মেল করে সব জানাই।’’ এলাকার বাসিন্দাদের একটাই বক্তব্য, ঘটনাটির সত্যাসত্য পুলিশ তদন্ত করে বের করে এলাকার বাসিন্দাদের আতঙ্ক মুক্ত করুক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দেওয়ার পরেই পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা তদন্ত শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বলেন, ‘‘সাধারণ বুদ্ধিতে কী বলে, এই দুটো জঙ্গি সংগঠন এইভাবে প্রকাশ্যে তাদের নেটওর্য়াক চালাবে? মনে হয় কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুটি নাম দিয়ে নেটওর্য়াক চালাচ্ছে। যে বা যারা এই কাণ্ড করছে, আমি অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দিয়েছি।’’