অভিরূপ দাস: ক্যানসার হলেই গন্তব্য কলকাতা নয়! জেলা হাসপাতালেও মিলছে চিকিৎসা। সাধারণ কেমো নিতে শহরে আসার প্রয়োজন ফুরোচ্ছে। জেলায় জেলায় ক্যানসার আক্রান্তদের দিয়েই এই বার্তা দিতে শুরু করল স্বাস্থ্য দপ্তর।
সম্প্রতি সিউড়িতে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. শুভ্রাংশু শেখর দত্ত, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. শুভ্রব্রত ঘোষের উপস্থিতিতে সেখানে কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের ক্লাস নেন ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত মিলন দত্ত (নাম পরিবর্তিত)। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্ট ডা. সোমা ঘোষ জানিয়েছেন, বাড়িতে বাড়িতে ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য যান কমিউনিটি হেলথ অফিসাররা। ক্যানসার হলেই কলকাতা চলো, এই ধারণা নির্মূল করতেই ক্যানসার আক্রান্তদের দিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল সচেতনতা ক্লাসের। ডা. সোমা ঘোষের কথায়, "এক ব্যক্তি মেটাস্টেটিক লাং ক্যানসারে আক্রান্ত। অর্থাৎ ফুসফুসের ক্যানসার উৎস ছেড়ে শরীরের অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়েছে। মস্তিষ্ক এমনকী হাড় পর্যন্ত ধরে নিয়েছে ক্যানসার। কিন্তু বীরভূম জেলাতেই উন্নত মানের চিকিৎসা পাচ্ছেন তিনি। সেটাই বলেছেন কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের।" বলেছেন, জেলায় চিকিৎসা করিয়েই সুস্থ আছেন। কলকাতায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ক্যানসার চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণের কাজ বহু আগেই শুরু করেছিল স্বাস্থ্য দপ্তর। এই স্বপ্ন সফল করতে এস এস কে এম হাসপাতালের সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার নিজে ঘুরেছেন বহু জেলায়। আপাতত স্তন ক্যানসার, মুখের ক্যানসার, সার্ভিকাল ক্যানসার, হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারকে পাখির চোখ করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ডা. সোমা ঘোষ জানিয়েছেন, "প্রতিটি ক্যানসারের রয়েছে আলাদা আলাদা উপসর্গ। কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের তা নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। স্তনে দীর্ঘদিন কোনও ফোলাভাব, মুখের ভিতরে কোনও ঘা অনেকদিন ধরে না শুকোলে, হঠাৎ ওজন কমে গেলে, অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসুন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেটাই বলছেন কমিউনিটি হেলথ অফিসাররা। জেলার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রেই চলছে ক্যানসারের স্ক্রিনিং।"
শুধু স্ক্রিনিং নয়, প্রত্যন্ত জেলাতেও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বন্দোবস্ত করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ক্যানসার আক্রান্তদের ব্যথা ও শারীরিক কষ্ট কমানোর জন্য পেইন ক্লিনিক খুলেছে জেলায় জেলায়। কিন্তু কতটা দ্রুত এগোচ্ছে কাজ? ডা. সোমা ঘোষ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বীরভূম জেলায় শেষ পাঁচ মাসে মুখ, স্তন, সার্ভিকাল ক্যানসারের রোগী মিলিয়ে ৩২৮৫ জনের স্ক্রিনিং হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যানসার আক্রান্ত এমন রোগী আছেন যাঁরা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। কেমোথেরাপি পেয়েছেন ১২৭ জন। জেলায় জেলায় বাড়িতে গিয়ে জটিল-দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের শুশ্রূষা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় প্যালিয়েটিভ কেয়ার। শুধুমাত্র বীরভূম জেলায় গত ৫ মাসে ৫৪৬৬ জনকে বাড়িতে গিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ক্যানসার আক্রান্ত ৯০০ জন। অনেকেই আগে কেমোথেরাপি নিতে গ্রাম থেকে শহর কলকাতায়, এমনকী ভিনরাজ্যে যেতেন। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের অঙ্কোলজিস্ট ডা. সোমা ঘোষের কথায়, বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে ক্যানসার চিকিৎসার শ্রীবৃদ্ধি হওয়ায় এখন সে প্রবণতা অনেক কমেছে।
