বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: দেশীয় আইনের ঊর্ধ্বে নয় টুইটারের (Twitter) নিজস্ব নীতি। এই বার্তা দিয়েই শুক্রবার টুইটারকে কার্যত তুলোধনা করেছে সংসদীয় কমিটি (Parliamentary panel)। এদিন শশী থারুরের (Shashi Tharoor) নেতৃত্বে সংসদের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে তলব করা হয়েছিল টুইটারকে। সংস্থার তরফে হাজির ছিলেন নীতি নির্ধারণ বিষয়ে সিনিয়র ম্যানেজার সগুফতা কর্মণ এবং আইনজীবী আয়ুষী কাপুর। প্রায় দেড় ঘণ্টা তাঁদের একপ্রকার জেরাই করেন কমিটির সদস্যরা। এই ব্যাপারে অগ্রণী ছিলেন কেন্দ্রের শাসক বিজেপির (BJP) সাংসদরা।
তবে জানা গিয়েছে, দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সদস্যরা একমত যে, দেশের আইনের থেকে টু্ইটারের নিজস্ব পলিসি বড় হতে পারে না। সূত্রের খবর দেশের তথ্য প্রযুক্তি আইন টুইটার কেন মানছে না, তা নিয়ে এদিন কড়া কড়া প্রশ্ন করেন বিজেপির রাজবর্ধন রাঠোর থেকে নিশিকান্ত দুবেরা। সেই দলে ছিলেন রাজ্যের কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও।
[আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তীকালীন CCO নিয়োগ করেও মিলল না স্বস্তি, আইনি রক্ষাকবচ হারাল Twitter]
টুইটারের কাছে প্রশ্ন করা হয়, কেন্দ্রের থেকে অনেক আগে বার্তা পেলেও এখনও পর্যন্ত তারা কেন এই ব্যাপারে কিছু জানায়নি? তাতে টুইটারের তরফ থেকে বলা হয়, তারা পরবর্তী সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। কর্তৃপক্ষের এই উত্তরে কমিটির সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। টু্ইটার কী ভাবে কারও আইডিতে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির সদস্যরা। কীভাবে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়, কে এই বিষয়গুলিকে নির্বাচন করেন সেই ব্যাপারেও সংস্থার আধিকারিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
এদিনের বৈঠকে কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন তোলেন, টুইটার নিজেকে কি পাবলিশার মনে করে? নাকি এডিটর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম? ভারতের মতো দেশে তাদের বিপুল সংখ্যক ইউজার আছে। এরপরেও কেন তারা এখনও কোনও ‘গ্রিভ্যান্স অফিসার’ নিয়োগ করেনি? এই ব্যাপারে আয়ারল্যান্ডের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। জানা গিয়েছে, এদিন সংসদীয় কমিটির প্রশ্নবাণে কোনও উত্তরই ঠিকভাবে দিতে পারেনি টুইটার কর্তৃপক্ষ। হয় তারা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরে জবাব দেবেন বলে প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ইনস্টাগ্রামের ভুল ধরিয়ে ফেসবুক থেকে ২২ লক্ষ টাকা পুরস্কার পেলেন ভারতীয় হ্যাকার]
তাদের জবাবে কমিটি যে সন্তুষ্ট হয়নি, সেই বার্তা এদিন তাদের প্রতিনিধিদের ভালভাবেই দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আবার টু্ইটার কতৃর্পক্ষকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তলব করা হবে বলেই সূত্রের খবর। গত কয়েকদিন ধরেই কেন্দ্র-টুইটার সংঘাত চলছে। বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর কিছু টুইটকে ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ বলে চিহ্নিত করার পর বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে।
কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদও টুইটারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যেই ভারতে আইনি রক্ষাকবচও হারিয়েছে এই মাইক্রোব্লগিং সাইট। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের এক প্রবীণ ব্যক্তির নিগ্রহ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক তকমা দেওয়ার অভিযোগে, টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। এদিন সেই মামলাতে ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মনীশ মাহেশ্বরীকে সাত দিনের মধ্যে গাজিয়াবাদ পুলিশ স্টেশনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।