অর্ণব আইচ: বিদেশ থেকে আসছে মূল্যবান উপহার। সঙ্গে ৬৫ হাজার ডলার (Dollar) ভরতি প্যাকেট। পাঠাচ্ছে বিদেশি বন্ধু। শুল্ক দপ্তরকে টাকা দিলেই হাতে এসে পৌঁছবে এসব। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) পরিচয় হওয়া ওই ‘বিদেশি বন্ধু’র উপহার পাওয়ার লোভে সর্বস্ব খোয়ালেন এক শিক্ষিকা। তাঁর কাছ থেকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযুক্তরা। পুলিশকে ওই শিক্ষিকা জানিয়েছেন, তিনি এখন প্রায় নিঃস্ব। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে মরিয়া পুলিশ। কেউ এভাবে ‘বন্ধু’ সেজে উপহার পাঠানোর টোপ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে ব্লক করার পরামর্শ দিয়েছে লালবাজার (Lalbazar)।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় এক বিদেশির। সে নিজেকে আমেরিকার (USA) সিভিল ইঞ্জিনিয়র বলে পরিচয় দেয়। ওই মহিলা তখন উত্তরাখণ্ডের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। যদিও পরবর্তী সময় তিনি কলকাতায় (Kolkata) চলে আসেন। এখন তিনি দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর থানা এলাকার টাউনসেন্ড রোডের বাসিন্দা। উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) থাকার সময়ই ফ্রাঙ্ক উইলিয়ামস নামে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় শিক্ষিকার। ক্রমে দু’জনের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে। শিক্ষিকার কাছ থেকে তাঁর হোয়াটস অ্যাপ নম্বর চায় ওই ব্যক্তি। হোয়াটস অ্যাপে দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ হয়। হোয়াটস অ্যাপ কলেও কথা হত আমেরিকার একটি নম্বর থেকে।
এরপর ওই নম্বরটি ব্লক করে দিয়ে অন্য একটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করে ওই ব্যক্তি। দ্বিতীয় মোবাইল নম্বরটি ব্রিটেনের (UK)। কয়েক মাস আগে ওই ‘বিদেশি বন্ধু’ তাঁকে জানায় যে, মহিলার জন্য প্রচুর উপহার পাঠাচ্ছে সে। এতে মহিলা খুশিই হন। এর মধ্যেই রঞ্জিতা কুমার নামে এক মহিলা ওই শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে মুম্বইয়ের শুল্ক বিভাগের কর্মী বলে পরিচয় দেয়। সে জানায়, অভিযোগকারিণীর নামে একটি পার্সেল এসে পড়ে রয়েছে। ওই পার্সেলে ডলার রয়েছে। সেই পার্সেল পেতে গেলে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে।
[আরও পড়ুন: মেলেনি মোদি সরকারের অনুমোদন, টেসলা নিয়ে এলন মাস্ককে বাংলায় আসার আহ্বান রাজ্যের মন্ত্রীর]
শেষ পর্যন্ত শিক্ষিকার নজরে পড়ে, তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আর কোনও টাকাই পড়ে নেই। তিনি প্রায় নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। এর পরও তাঁকে পূজা দেবী নামে একজন ফোন করে। সে রিজার্ভ ব্যাংকের নাম করে আরও ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা চায়।
[আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: সদ্যোজাতকে বাঁচাতে পাশে দাঁড়ানোর আর্তি টলিপাড়ার শিল্পীর, এগিয়ে এল অভিষেকের টিম]
এরপরই তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি ক্রমে লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের ধারণা, এই জালিয়াতির পিছনে রয়েছে নাইজেরীয় অথবা দিল্লির গ্যাং। এই ধরনের গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে কয়েকজন মহিলা, যারা জাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে সাহায্য ও ‘কলার’এর কাজও করে। অনেক সময় বিশেষ বেআইনি অ্যাপের সাহায্যেই বিভিন্ন দেশের নম্বর থেকে ফোন করে। তাতেই মনে হয়, ‘বন্ধু’টি হয় আমেরিকা, নয় ব্রিটেনের। অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ যাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তাদের শনাক্ত করেছে। তাদের মাধ্যমে আসল জালিয়াতদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে পুলিশ।