কৃষ্ণকুমার দাস: করোনার ধাক্কায় বাংলা থেকে কি ‘ফ্লু’ উধাও হয়ে গিয়েছে? নাকি ইনফ্লুয়েঞ্জাকেও এখন ‘কোভিড’ বলেই চিকিৎসা করা হচ্ছে? সংক্রামক ব্যধির চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশ্বকে কার্যত পথ দেখায় যে কেন্দ্র সেই আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (CDC) করোনা ও ফ্লু’র পরীক্ষায় একই রিপোর্ট আসার পর সন্দেহ জেগেছে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation)। বস্তুত এই কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মহানগরে কতজনের ‘ফ্লু’ (Flu) ও করোনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ শুরু করছে পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগ। জনস্বাস্থ্য নিয়ে পুরসভার নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যই এমন সমীক্ষা করা হচ্ছে বলে দাবি শীর্ষকর্তাদের।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, “ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে পুর-ক্লিনিকে কত নাগরিক গত দু’বছরে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন তাঁর তথ্য সংগ্রহ হবে। করোনার আগের পাঁচ বছরের ‘ফ্লু’ আক্রান্তের তথ্য ও উপসর্গের লক্ষণ নিয়ে তুলনামূলক বিচার এবং বিশ্লেষণ করবেন পুর চিকিৎসকরা।” জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই সমীক্ষার প্রয়োজনে শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গত ৭ বছরের ‘ফ্লু’ রোগীর তুলনামূলক তথ্যও সংগ্রহ করে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিচার করবেন বিশেষজ্ঞরা।
[আরও পড়ুন: Omicron: কীভাবে বুঝবেন আপনি ওমিক্রন আক্রান্ত? জেনে নিন উপসর্গ]
ঋতু পরিবর্তনের জেরে শহরে কোভিড (COVID-19) ছাড়াও অনেক বেশি সংখ্যায় নাগরিকরা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে রবিবার মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, “আগের চেয়ে ফ্লু কতটা কমেছে তার কোনও তুলনামূলক তথ্য নেই। এটা নিয়ে পুরসভা বিস্তৃতভাবে সমীক্ষা করলে, তবে কলকাতার রেফারেন্সে কিছু বলা সম্ভব হতে পারে।”
বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য চিকিৎসায় মার্কিন গবেষণা সংস্থা সিডিসির (আটলান্টা) গাইডলাইনকে কার্যত বেদবাক্য হিসাবে ধরেন চিকিৎসকরা। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীনবাবু সিডিসি’র সুপারিশ উল্লেখ করে জানিয়েছেন, “সত্যি সত্যি যদি ফ্লু ও কোভিড সংক্রমিতের আরটিপিসিআর (RT-PCR) পরীক্ষা রিপোর্ট একই হয়, তা হলে খুবই চিন্তার। সিডিসি আমেরিকায় ১ জানুয়ারি থেকে আরটিপিসিআর বন্ধের সুপারিশ করেছে। আমরা জানতে চাইছি, সত্যিই ফ্লু রোগীকে কোভিড বলে দেখানো হচ্ছে কি? নাকি আগের চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগী কমে গেল? কমলে কত সংখ্যায় ও কেন?”
[আরও পড়ুন: সৌরভ এফেক্ট! ‘ককটেল’ থেরাপির চাহিদা বাড়ছে শহরে]
কোভিড চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক আর এন টেগোরের ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস জানান, “এটা ঠিক আগের চেয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী বেশ কমেছে। এর মূল কারণ, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবারই মাস্ক ব্যবহার এবং ঘরের বাইরে কম আসা। তবে নিয়ম মেনে বিস্তৃত সমীক্ষা হলে অবশ্যই নাতিশীতোষ্ণ মহানগর কলকাতার প্রেক্ষাপটে ইনফ্লুয়েঞ্জার তথ্য জানা যাবে।”