সুব্রত বিশ্বাস: রাজ্যের প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, জলসম্পদ মন্ত্রী-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অন্য রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরাও উপস্থিত থাকতে পারেন হাওড়া স্টেশনের উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে। এসপিজি কর্তাদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকের পরই বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তায় প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক অফিস টাইমে ট্রেন বাতিল না করে নিয়ন্ত্রিত করা হবে ট্রেনগুলি। ওই সময়ে যে ট্রেনগুলি হাওড়া আসার কথা সেগুলি হাওড়া না এসে আগেই যাত্রা বাতিল করবে।
সকাল ৯.১৮ যে উলুবেড়িয়া লোকালটি হাওড়া আসার কথা তা সাঁতরাগাছিতে এসে যাত্রা বাতিল করবে। ৯.৩৭ হাওড়া আসে যে পাঁশকুড়া লোকাল ও সওয়া এগারোটার সময়ের মেচেদা লোকাল তা আগেই যাত্রা বাতিল করবে। ১০.৫৫ ও ১১.০৫ মিনিটে যে পাঁশকুড়া ও উলুবেড়িয়া লোকাল হাওড়া আসে, তা মাঝপথেই চল্লিশ মিনিটের বেশি সময় ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব রেলের ট্রেনগুলি যেহেতু নিউ কমপ্লেক্সে আসে, সেখানেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফলে এই সিদ্ধান্ত। তবে পূর্ব রেলও নিরাপত্তার বিষয়ে সাড়ে দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত আপ ও ডাউন ট্রেনগুলি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে বলে জানা গিয়েছে। ওই সময়ে হাওড়া ওল্ড কমপ্লেক্স থেকে নির্ধারিত ট্রেনগুলি দেরিতে ছাড়বে। ডাউন ট্রেনগুলিও কারশেডের আগে লিলুয়া, বেলুড়ের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য এই ট্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি স্টেশনেও যাতে ভিড় না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: নিউইয়ার সেলিব্রেশনে রাজ্যে নিষিদ্ধ শব্দবাজি, বাজানো যাবে না ডিজে-ও, দূষণ রুখতে কড়া নবান্ন]
নির্ধারিত সময়ের আগে যে সব যাত্রী হাওড়া আসবেন তাঁরা যাতে তড়িঘড়ি নির্বিঘ্নে কলকাতা চলে যেতে পারেন তার জন্য ওল্ড কমপ্লেক্সের সব গেটগুলিকে ফাঁকা করে রাখবে পুলিশ ও আরপিএফ আধিকারিকরা। হাওড়া ৮ ও ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্মের থেকে গঙ্গার ঘাটের দিকে যেতে যে সাবওয়ে রয়েছে তা দিয়ে যাত্রীদের পাঠানো হবে। বুধবার দফায় দফায় এসপিজির সঙ্গে রেল, রাজ্য পুলিশ ও আরপিএফ কর্তাদের বৈঠক হয়। নিরাপত্তার জন্য বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউ কমপ্লেক্সের ক্যাবওয়ে-সহ ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ওই স্টেশনের থেকে যাতায়াতকারী ট্রেনগুলিকে ওল্ড কমপ্লেক্স থেকে চালানো হবে। বুধবারই হাওড়া স্টেশনের আশপাশ থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়, গঙ্গার পাড়ের হোটেলগুলিও আজ থেকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, বন্দে ভারত ট্রেন নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। দলের বেশিরভাগ সাংসদ ও বিধায়কদের হাওড়া স্টেশনে থাকতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর বিজেপির একাধিক সাংসদ, বিধায়করা চাইছেন, ট্রেনটিতে চড়ে নিজের নিজের এলাকায় নামতে। তাই বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড় করানোর আব্দার শুরু করেছে বিজেপি। বন্দে ভারত নিয়ে দলের প্রচারকে তুঙ্গে তুলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। পূর্ব রেলের সিপিআরও একলব্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, যারা আগে আবেদন করেছেন তারা ট্রেন চড়ার সুযোগ পাবেন। উদ্বোধনের দিন বেশ কিছু স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে, সেখানে নেমে যেতে পারবেন উচ্ছুকরা।
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চের সজ্জায় বুধবারই স্টেশনে এসেছে পঁচিশ হাজার গাঁদা ফুলের মালা। দেড় হাজারেরও বেশি বনসাই সহ আড়াই হাজারের বেশি বাহারি গাছে সজ্জিত করা হয়েছে ক্যাবওয়েটি। ক্যাবওয়ের দেওয়ালে শিল্পীর তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মোদির ও বন্দে ভারতের ছবি। বুধবারই প্রতীক্ষিত ট্রেনটির নম্বর জানিয়ে দিয়েছে রেল বন্দে ভারতের নম্বর ২২৩০১ আপ ও ২২৩০২ ডাউন। ১ জানুয়ারি থেকে ট্রেনটি সপ্তাহে ছ’দিন চলবে। ৫.৫৫ মিনিটে হাওড়া ছেড়ে এনজেপি পৌঁছবে দুপুর ১.২৫ মিনিটে। বিকেল ৩.০৫ মিনিটে এনজেপি ছেড়ে রাত ১০.৩৫ হাওড়া আসবে। আপাতত মালদহতে স্টপেজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আপের ট্রেনটি মালদহ পৌঁছবে বেলা ১০.৩৫ মিনিটে ডাউনে বিকেল ৫.৫০ মিনিটে নির্ধারিত সময়। ট্রেনটির এই বিষয়গুলি জানানো হলেও এখনও সিস্টেমে দেওয়া হয়নি। ফলে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়নি।