সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইদের শুভেচ্ছা। অথচ উল্লেখ নেই 'ইদ' (Eid) কথাটারই। ফেসবুক পোস্টে ইদের সকালে শুধু 'উৎসবের শুভেচ্ছা' জানাল সিপিএম। বাম নেতানেত্রীরা নিজেদের ফেসবুক পেজে আলাদা আলাদাভাবে শুভেচ্ছা জানালেও দলগতভাবে যে পোস্ট করা হয়েছে, তাতে উল্লেখ নেই ইদের। সেটা কি সচেতন ভাবে? ভোটের অঙ্ক কষে? আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
বুধবার রাতে দলের ফেসবুক পোস্টে ইদ উপলক্ষে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের একটি শুভেচ্ছাবার্তা পোস্ট করা হয়। তবে সেটা ছিল মূলত সেলিমের বার্তা। বৃহস্পতিবার সকালে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেই পোস্টারে শুধু লেখা ‘উৎসবের শুভেচ্ছা’। নিচে ছোট করে উর্দুতে লেখা হয়েছে, ‘হক রুটিরুজি, জনতাই পুঁজি’। যা এ বারের ভোটে সিপিএমের (CPIM) স্লোগান। সচেতনভাবে ইদ কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বস্তুত মমতা সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বামেদের ক্ষেত্রে উলটো। অন্তত প্রকাশ্যে ধর্মের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করেন কমরেডকুলের শিরোমণিরা। সেটাই দাবি দলের শীর্ষনেতা শমীক লাহিড়ীর। তিনি বলছেন, আমরা উৎসবকে উৎসব হিসাবেই দেখি। কোন ধর্মের উৎসব, কোন উৎসব উল্লেখ করার দরকার নেই। ব্যক্তিগত ভাবে কোনও নেতা যদি পোস্ট করেন, তাঁরা সেটা তাঁদের মতো করেই করে থাকেন।"
[আরও পড়ুন: ন্যাশনাল হেরাল্ডের ৭৫২ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্তে সায় PMLA কর্তৃপক্ষের, চাপে গান্ধীরা]
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে অতীতে সিপিএম একাধিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছাবার্তায় সেই অনুষ্ঠানের উল্লেখ করেছে। সাধারণত নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তায় ‘শারদ শুভেচ্ছা’র উল্লেখ থাকে। গত পুজোতেও তাই ছিল। দীপাবলির শুভেচ্ছাতেও সচরাচর উল্লেখ থাকে আলোর উৎসবের। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনেও বেশ কয়েকটি পোস্টার প্রকাশ করেছিল রাজ্য সিপিএম (CPIM)। সেই সব পোস্টারে ‘বড়দিনে’র উল্লেখ ছিল। ব্যতিক্রম শুধু ইদ।
২০২১ সালের সিপিএমের শুভেচ্ছাবার্তা।
রাজনৈতিক মহল বলছে এর নেপথ্যে লোকসভার আগে হিন্দু ভোটের সমীকরণ কাজ করছে। সেই ২০১১ সালের পর থেকেই রাজ্যে ক্রমহ্রাসমান বাম ভোট। ঠিক সমহারে বাড়ছে বিজেপি। বামের (Left Front) ভোট রামে যাওয়ার যে প্রবণতা সেটাকে সম্ভবত এবার বদলাতে চাইছেন কমরেডরা। আসলে বামেদের 'মুসলিমপ্রীতি' নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। ২০২১ সালে আইএসএফকে সঙ্গে নিয়ে জোট, তার পর ভরা ব্রিগেডের মঞ্চে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বাম নেতাদের এক মঞ্চে ভাষণ দেওয়া, সেই অভিযোগ আরও জোরাল করেছে। বাম নেতাদের অনেকেই এখন স্বীকার করেন, একুশের নির্বাচনের আগে আইএসএফ সখ্য ভুল ছিল। যা পার্টির হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছে। লোকসভার আগে সেই ভোট ফেরাতে মরিয়া সিপিএম। সম্ভবত সেকারণেই এবার 'মুসলিম' ছোঁয়াচ এড়িয়ে যেতে চাইছে আলিমুদ্দিন। বরং হিন্দু ভোটারদের মন পেতে শায়রা হালিমের মতো প্রার্থীদের কৃষ্ণের ছবি-সহ কার্ড বিলি করতে হচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে কোনও নেতাই এই নীতি মানতে নারাজ।
[আরও পড়ুন: আমরা জেলে পাঠালে আদালত মুক্তি দিচ্ছে না কেন? ভোটের আগেই বিরোধীদের তোপ রাজনাথের]
স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে কটাক্ষ ছুটে এসেছে বিরোধী শিবির থেকে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলছেন, "এই প্যাঁচ সিপিএমের পক্ষেই সম্ভব। এগুলো দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়। পুজোর সময়ে বুক স্টল দেবে অথচ পুজো বলবে না। ইদের দিন শুভেচ্ছা জানাবে, অথচ ইদ বলবে না। মানুষ কিন্তু সোজা কথা সোজা করতে পড়তেই পছন্দ করেন।"