অরিঞ্জয় বোস, বহরমপুর: লড়াইটা কঠিন। কিন্তু বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার অধীর চৌধুরীকে চমকে দিতে পারেন ইউসুফ পাঠান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল সমালোচক। সম্ভবত সেকারণেই তাঁর খাসতালুক দখলে এবার মরিয়া তৃণমূল। প্রার্থী করা হয়েছে জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে (Yusuf Pathan)। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের সবচেয়ে হেভিওয়েট কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে বহরমপুর। তৃণমূলের দাবি, প্রচারে ইউসুফ যেভাবে সাড়া পাচ্ছেন, তাতে তাঁর জয় সময়ের অপেক্ষা। ওয়াকিবহাল মহলও মনে করছে, এবার বহরমপুরে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতেই পারেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী।
কোন কোন ফ্যাক্টর কাজ করছে ইউসুফের পক্ষে?
১। অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury) বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ। তাঁর একটা ব্যক্তিগত ক্যারিশমা আছে, এ কথা সত্যি। কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে ২৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। যা প্রবলভাবে কাজ করছে অধীরের বিরুদ্ধে।
২। জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার হওয়ায় ইউসুফকে নতুন করে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতে হচ্ছে না। বলা বাহুল্য প্রচারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। যেখানেই যাচ্ছেন, কাতারে কাতারে মানুষ ইউসুফের দর্শনে উদগ্রীব। তাছাড়া ইউসুফও ঘরের ছেলের মতো মানুষের মধ্যে মিশে যাচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: ইভিএম-ভিভিপ্যাট ১০০ শতাংশ মিলিয়ে দেখার দাবি, কমিশনের থেকে ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট]
৩। মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় সমস্যা এতদিন ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিন্তু ইউসুফ প্রার্থী হওয়ায় নিজেদের বিবাদ ভুলে একজোট জেলার সব নেতা। অপূর্ব সরকার থেকে হুমায়ুন কবীর, তারকা প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে প্রাণপাত করছেন জেলার প্রায় সব নেতা।
৪। অধীর নিজে পাঁচ বারের সাংসদ হলেও বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে বহরমপুর কেন্দ্র কয়েক লক্ষ ভোটে তৃণমূলের (TMC) থেকে পিছিয়ে তিনি। তাছাড়া রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতো বহরমপুরের ভগ্ন কংগ্রেসের সংগঠন। আদৌ সব বুথে অধীর এজেন্ট বসাতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। ২০১৯ লোকসভাতেও তাঁর জয়ের ব্যবধান অনেকটা কমে গিয়েছিল। সেবারে শুধু বহরমপুর এবং কান্দিতে বিপুল লিড পান প্রদেশ কংগ্রেস (Congress) সভাপতি। এবার ওই দুই বিধানসভাতেও কংগ্রেসের অবস্থা বিশেষ সুবিধানজনক নয়।
৫। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া সর্বত্র পৌঁছেছে। ব্যতিক্রম নয় বহরমপুরও। বিশেষ করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ভাতা বাড়ার পর মহিলা ভোটাররা তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিপদ বাড়বে অধীরের।
[আরও পড়ুন: ভোটের মাঝে ৫ কোটি টাকা চেয়ে উদয়ন গুহকে চিঠি KLO’র, তুমুল চাঞ্চল্য]
৬। তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, অধীর বহরমপুরে যেতেন বিজেপি ভোটারদের সমর্থনে। সেই অভিযোগ একেবারে অমূলক নয়। তৃণমূলকে হারাতে অনেক বিজেপি সমর্থকই ভোট দেন অধীরকে। এবার ডা. নির্মল সাহা প্রার্থী হওয়ায় বিজেপিও ওই কেন্দ্রটিকে সম্ভাবনাময় আসন হিসাবে দেখছে। সেক্ষেত্রে গেরুয়া শিবির নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা করবে। ফলে অধীর যে বাড়তি সুবিধা ২০১৪ থেকে পেয়ে আসছেন, সেটা এবার পাবেন না।
৭। অধীরের সঙ্গে বিজেপির (BJP) আঁতাঁতের যে অভিযোগ তৃণমূল তুলছে, সেটা সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আবার অধীর যেভাবে নিজের আসন বাঁচাতে সিপিএমের দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন, সেটা পুরনো কংগ্রেস কর্মীরাও ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
সব মিলিয়ে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে বেশ চাপে পাঁচবারের সাংসদ অধীর। তবে একথাও ঠিক নিজের ব্যক্তি ক্যারিশমা দিয়ে সবটা ছাপিয়ে যেতে পারেন লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা। কিন্তু ব্যক্তি ক্যারিশমার কথা বলতে গেলে দু'বার বিশ্বকাপজয়ী জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানই বা কম যান কোথায়?