বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: একজন বাঙালি হয়েও প্রায় সাত দশক নিয়ন্ত্রণ করেছেন বিশ্বনাথধাম বারাণসী। একবারের কাউন্সিলর। টানা সাতবারের বিধায়ক ও একবার মন্ত্রীও হয়েছেন। তিনি শ্যামদেব রায়চৌধুরী। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই রাজনীতি বিমুখ। পদ্মশিবিরের নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক চিরকালের মতো ছিন্ন করেছেন। কাশীর করিডর বিতর্কে মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গ টানলেন প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক। এখন বারাণসীর জঙ্গমবাড়ির কানাইয়া চিত্র মন্দিরের একচিলতে ফ্ল্যাটে টিভি আর খবরের কাগজ পড়ে সময় কাটান। সংবাদ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি বিশ্বনাথধামের বাঙালিবাবুর।
রাজনীতি ছাড়লেন কেন? শ্যামদেবের কথায়, “আমি নিজে ধার্মিক হলেও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করিনি। সেবার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করেছি। মানুষের সেবাই ছিল জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। এখন তা হচ্ছে না। এটা আমার কাছে খারাপ লাগার জায়গা।” তাহলে এখন কী হচ্ছে? শ্যামদেবের বিস্ফোরক দাবি, “এখন ধর্মের নামে অধর্মের রাজনীতি হচ্ছে। সেবা করতে কেউ রাজনীতিতে আসে না। সকলেই ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করছে। সেক্ষেত্রে আমি পিছিয়ে পড়ছিলাম। বারবার তাল কাটছিল। হয়তো নতুনদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলাম না। এখন যাঁরা বিজেপি করছেন, তাঁরা অনেক আধুনিক। আমি পুরোনো হয়ে গিয়েছি। বয়স তো অনেক হল। শরীর আগের মতো পরিশ্রম নিতে পারে না।”
[আরও পড়ুন: ৫ দিনের মধ্যে খুনের হুমকি! সোশাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক দাবি অর্জুন সিংয়ের]
প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্ত্রীর মতে, ক্ষমতায় থাকার জন্য এখন রাজনীতি হচ্ছে। ক্ষমতা দখলই এখন একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষমতায় থাকার জন্য অধর্মের পথে হাঁটতেও দ্বিধা করছে না এখনকার রাজনীতিকরা। তাহলে কি রাজনীতি আর ধর্ম মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে? শ্যামদেব মনে করেন, “ধর্ম সবসময় সঠিক পথ দেখায়। কিন্তু তা হচ্ছে না। আবার বলছি, ধর্মের নামে অধর্ম হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: ‘আমার জন্ম জৈবিক প্রক্রিয়ায় নয়’, মোদির মন্তব্যে মমতার পালটা, ‘আমাদের তো মা-বাবা আছে’]
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠছে তো বিজেপির বিরুদ্ধেই। প্রাক্তন বিধায়ক প্রশ্ন এড়িয়ে জানালেন, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকে রাজনীতিতে এসেছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর ও রাজনীতিকে এক করিনি। সবসময় মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে চলেছিলাম।” তিনি মন্ত্রী বা বিধায়ক থাকার সময় কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এত আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। এখন আধুনিকতার মোড়কে মন্দির চত্বর, করিডর হচ্ছে। সে কথা মেনে নিয়েছেন শ্যামদেব। জানালেন, “খুব নোংরা ছিল। মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) যখন মন্দির দর্শনে আসেন তিনিও অপরিসর রাস্তা ও নোংরা দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। এখন মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি মন্দিরে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে। দর্শণার্থীর সংখ্যা প্রতিদিন কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমস্যা হলে প্রশাসন দেখবে।” কিন্তু বারাণসীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে না? শ্যামদেবের সাবধানী উত্তর, “আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে গেলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অবশ্যই দুইয়ের মিশেল থাকা জরুরি। কী হচ্ছে আমি জানি না। আপনি ভাবতে পারেন, আমি এড়িয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ যাচ্ছি। এই বয়সে আর বিতর্কে জড়াতে চাই না।”
প্রবাসী বাঙালি হলেও বাংলার খবর রাখেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন কী? শ্যামদেবের মতে, “উনি লড়াকু নেত্রী। লড়াই করে উঠে আসা একজন নেত্রী। এখানে বসে টিভি ও খবরের কাগজ পড়ে যেটুকু বুঝতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বদলে গিয়েছেন। বিরোধী রাজনীতি তাঁর জন্য সঠিক জায়গা। প্রশাসনকে চাপে রাখতে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারতেন। এর বেশি কিছু বলব না।” আবার কি রাজনীতিতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না? বৃদ্ধ প্রাক্তন বিধায়কের সাফ জবাব, “না। এখনকার রাজনীতি আমার জন্য নয়। আমার নীতি-আদর্শের সঙ্গে বিরাট ফারাক তৈরি হয়ে গিয়েছে। মানিয়ে নিতে পারব না। ওঁরাও আমাকে মেনে নিতে পারবেন না।”