কৃষ্ণকুমার দাস: দমদমে সুজন চক্রবর্তী বাম প্রার্থী হওয়ায় এবার লোকসভা ভোটে (Lok Sabha 2024) অধ্যাপক সৌগত রায়ের জেতা শুধু সহজ নয়, মার্জিন অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। একদা সিপিএমের গড় দমদমে ২০১৯ সালে বাম ভোট রামে চলে যাওয়ায় সৌগতর মার্জিন মাত্র ৫২,৭৭৯ হয়েছিল। সিপিএম নেতাদের সঙ্গে ভোটে বিজেপির প্রকাশ্যেই বোঝাপড়া হয়েছিল। এমনকী নাগেরবাজারে এক সিপিএম নেতার বাড়িতে তৎকালীন এক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা এলে জোড়াফুল কর্মীরা বিক্ষোভও দেখান।
প্রয়াত অমিভাত নন্দীর দমদমে বাম ভোট কমে ১৩.৯ শতাংশ হলেও উল্টোদিকে পদ্মফুলের ভোট বেড়ে ৩৮.১১ শতাংশ হয়েও জিততে পারেননি শমীক ভট্টাচার্য। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়া নিজেদের ট্রাডিশনাল ভোট ফিরিয়ে আনতে সুজনের (Sujan Chakraborty) মতো একজন পার্টিঅন্ত প্রাণ ও পরিচিত নেতাকে প্রার্থী করা হল। অবশ্য দমদমের পার্টি ক্যাডাররা অধিকাংশই স্বীকার করছেন, ‘আমাদের প্রাণের মানুষ সুজনদা এখানে প্রার্থী হওয়ায় সৌগত রায়ের জেতা ১০০ শতাংশ কনফার্ম হয়ে গেল।’ স্বয়ং সৌগত রায় (Sougata Roy) বলছেন, ‘‘সুজন এখানে সাধারণের কাছে পরিচিত নন, যাদবপুরের কিছু মানুষ চেনেন। এখানে ওঁর গুরুত্ব নেই।’’ দু’সপ্তাহ হয়ে গেল পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন সৌগত, কিন্তু নিজেদের প্রার্থী না পাওয়ায় হতাশ বিজেপি কর্মীরা এখনও দেওয়াল দখল করেনি।
[আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোর ‘ওভারহাইপড’! প্রাক্তন ভোটকুশলীকে নিয়ে বিস্ফোরক অভিষেক]
সুজন মানে যাদবপুর। ৬৫ বছরে পা দেওয়া সুজন এখনও বাম-ছাত্রযুবদের কাছে বাড়তি আবেগ। যাদবপুরের অলিগলি প্রায় মুখস্ত তাঁর। মানুষের সঙ্গে তিনি মেশেন কংগ্রেসি স্টাইলে। শুক্রবারও সোনারপুরের ঘাষিয়াড়ায় বামপ্রার্থীর সমর্থনে জনসভায় সুজনকে ঘিরে পার্টি কর্মীদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। নয়া প্রজন্মকে পার্টির সামনের সারিতে চেয়ে এবছর নিজে ভোটে লড়বেন না বলে সরেও দাঁড়ান। সেই ৮০-র দশক থেকে রাস্তায় থাকা সুজন নিজেই পার্টির কাছে সোনারপুরের বাসিন্দা সৃজনকে যাদবপুরের প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার পরেও তিনি কেন দমদমে প্রার্থী? নিজের পরিচিত মাঠ যাদবপুর ছেড়ে দমদমে সুজনকে লড়তে পাঠানোর পিছনে আলিমুদ্দিনের কোন অঙ্ক?
পার্টির একাংশ বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের ক্ষমতা এখন শমীক লাহিড়ীদের হাতে। পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর জনপ্রিয়তাকে শুধু ঈর্ষা করেন না, দু’চোখে দেখতে পারেন না। সেই সেলিম-শমীক জুটিই পার্টিতে আরও কোণঠাসা করতেই দমদমে ঠেলেছেন যাদবপুরের প্রাক্তন বাম সাংসদকে। কারণ, সুজন দমদমে তৃতীয় হবেন এটা যেমন নিশ্চিত, তেমনই গতবার জমানত জব্দ হওয়া পার্টির হার কতটা উদ্ধার করতে পারেন সেটাও এবার চ্যালেঞ্জের মুখ ফেলে দিয়েছেন সেলিম (Mohammad Selim) গোষ্ঠী। যদিও আলিমুদ্দিনের এক প্রবীণ নেতার দাবি, অধীরকে ম্যানেজ করে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন সেলিম। নয়া প্রজন্মকে উপেক্ষা করে সিনিয়র নেতা সেলিম ভোটে দাঁড়ানোর রাস্তা সাফ করতে গিয়ে উদাহরণ খাঁড়া করতেই নিজের চক্ষুশূল সুজনকে দমদমে ঠেলে দিলেন রাজ্য সম্পাদক। যদিও সুজন নিজে বলছেন,‘‘অবিভক্ত ২৪ পরগনায় পার্টির কাজে দমদম কেন্দ্রে বহু মিটিং করেছি। প্রচারে এসে পুরানো কমরেডদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, খুব সাড়া পাচ্ছি।’’
[আরও পড়ুন: চলছে গুলি, লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত মানুষ! দেখুন মস্কোয় হাড়হিম করা জঙ্গি হামলার ভিডিও]
দমদমের সঙ্গে যাদবপুরেও বড় ধাক্কা খাচ্ছে বামশিবির। কারণ, সুজনকে যারা ভালোবাসেন এমন বহু পার্টি কর্মী নাকি দমদমে যাচ্ছেন ভোটের কাজে। স্বভাবতই চেনামাঠে সুজন প্রার্থী না হওয়ায় যাদবপুরে সায়নীর অনেকখানি অ্যাডভ্যান্টেজ। দমদমে সৌগত রায়ের হয়ে যারা ভোটের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সেই মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, নির্মল ঘোষ, মদন মিত্র, অদিতি মুন্সিরা সকলেই একবাক্যে বলছেন, ‘‘সুজন বামপ্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলের অ্যাডভান্টেজ।’’ বামের ভোট রামে যাওয়া কিছুটা হলেও সুজন যে আটকে দিতে পারবেন তা স্বীকার করছেন দমদম-বরানগর থেকে খড়দহ, সাত বিধানসভার প্রবীণ কমরেডরা। এখন দেখার সত্যিই গতবারের বামপ্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যর পাওয়া ১৩.৯ শতাংশ ভোট কতখানি টেনে তুলতে পারেন সুজন। তৃতীয় স্থান পেলেও শেষপর্যন্ত জমানত বাঁচাতে পারবেন কি? ২০১৪ সালে সৌগতর মার্জিন ১ লাখ ৪০ হাজার এবার সত্যিই টপকে যায় কি না তা নির্ভর করছে দমদমে এবছর বিজেপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তার উপর।