অর্ণব আইচ: ভক্তিতে গদগদ। পরনে লালপেড়ে শাড়ি। হাতে পুজোর ডালা। ঘনঘন প্রণাম করছেন প্রতিমাকে। বরং ভক্তির ‘বহর’ দেখে পুরোহিত ও অন্য ভক্তরাও একটু এগিয়ে দিচ্ছিলেন বয়স্কা মহিলাকে। প্রতিমার একেবারে সামনে দাঁড়ালেন তিনি। পুজো সেরে মহিলা বেরিয়ে যাওয়ার পরই টনক নড়ল পুরোহিত ও মন্দির কর্তৃপক্ষের। দেখা গেল, হয় প্রতিমার সোনা বা রুপোর মুকুট, গয়না অথবা কোনও দামি ধাতুর অঙ্গ উধাও!
শুনতে গল্পকাহিনির মতো মনে হলেও বরানগরের বাসিন্দা এক বর্ষীয়সীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ। দাবি, এই পদ্ধতিতে কলকাতা ও তার আশপাশের জেলার মন্দির ঘুরে গয়না চুরি করে বেড়াতেন তিনি। অভিযুক্তের নাম কৃষ্ণা মাইতি। বেহালার এক মন্দিরে চুরির অভিযোগে লালবাজারের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেছেন তাঁকে।
পুলিশের অভিযোগ, নিজস্ব পদ্ধতিতেই বেহালার চণ্ডীতলা এলাকার সতীমাতার মন্দিরে হানা দেন অভিযুক্ত। প্রায় ৫৬ বছর বয়সের কৃষ্ণার বাড়ি উত্তর শহরতলির বরানগরে হলেও চুরির উদ্দেশ্য নিয়েই নাকি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। লক্ষ্য রাখতেন প্রত্যেক এলাকার মন্দিরের উপরে। বলা হচ্ছে, যে কোনও মন্দির দেখলেই গদগদ ভক্তিভাব দেখিয়ে ঢুকে পড়তেন সেই মন্দিরে। নজর রাখতেন প্রতিমার সোনা বা রুপোর গয়না রয়েছে কি না। তাঁর প্রণামের ঘটা দেখে কেউ বুঝতেও পারতেন না যে, আসলে রেইকি করতে তিনি এসেছেন মন্দিরে।
পুলিশের দাবি, রেইকির সময় কৃষ্ণা লক্ষ করতেন মন্দির বা তার আশপাশের কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, পুরোহিতরাও কতটা নজরদারি করেন। এর পর ‘টার্গেট ফিক্স’ করে মন্দিরে হানা দেওয়া। আর এভাবেই নাকি বেহালার চণ্ডীতলার একটি মন্দিরে আসেন কৃষ্ণা। পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, রীতিমতো ডালা নিয়ে পুজো দেওয়ার নাম করে প্রতিমার অনেকটা কাছে কৃষ্ণা এগিয়ে যান। প্রায় মিনিটখানেক ধরে প্রতিমা আড়াল করে রাখেন। এর মধ্যেই প্রতিমার তিনটি রুপোর হাত খুলে নেন! পুরোহিত ও অন্য ভক্তদের চোখে এই চুরির ঘটনা সামনে আসে, ততক্ষণে নাকি অন্তরালে চলে গিয়েছেন অভিযুক্ত। মন্দির কর্তৃপক্ষ বেহালা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
দাবি, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করার পর সিসিটিভি ফুটেজে খুব তাড়াতাড়ি ওই মহিলাকে বেরিয়ে যেতে দেখেন। যেহেতু আগে একবার কলকাতা পুলিশের হাতে কৃষ্ণা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাই তাঁকে শনাক্ত করা সহজ হয়ে যায়। এর মধ্যে কৃষ্ণাও চণ্ডীতলার পর বেহালা, পর্ণশ্রী এলাকায় ঘুরে ঘুরে রেইকি করতে শুরু করেন। সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বেহালা এলাকা থেকেই কৃষ্ণা মাইতিকে গ্রেপ্তার করে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। জেরার মুখে তিনি নাকি স্বীকার করেছেন, যাবতীয় গয়না ও মূল্যবান সামগ্রী পোস্তায় বিক্রি করে দিতেন। রুপোর হাতগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
