বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, লখনউ: বাঘ কুয়োয় পড়লে তাকে বাঁচানো মানবিকতা। কিন্তু ডাঙায় তুললে সে উদ্ধার কর্তাকেই খাবে। তাই উদ্ধারকর্তা কুয়ো থেকে ততটাই তুলবেন যাতে বাঘ তাঁকে খেতে না পারে। দেশের রাজনীতিতে এই প্রবাদ অতি পরিচিত। বিশেষ করে যে কোনও রাজনৈতিক দলের ঘরোয়া কোন্দলে। এবারের নির্বাচনে এই প্রবাদ মুখে না এনেও গেরুয়া শিবিরের অন্দরে বিতর্ক উসকে দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। জানান, নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে প্রথম খাবেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। তারপর লাইনে..........।
এই সহজ সরল সারবত্ত্বাটি কেজরিওয়াল বোঝেন, আর যোগী বোঝেন না সেটা যে হতে পারে না তা অতি মূর্খও জানে। তাই নির্বাচনের প্রথম থেকেই সতর্ক যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adithyanath)। এমনকী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও খুব বেশি মতামত দেওয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। ফলে একমাত্র রাজ্য যেখানে ডজন খানেক বিতর্কিত সাংসদ থাকা সত্বেও প্রার্থী তালিকায় বড়সড় রদবদল থেকে বিরত থাকেন মোদি-শাহরা (Amit Shah)। এর পর প্রচারেও সতর্ক উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। বিতর্কিত সাংসদদের অনেকের প্রচার এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। ভোটবাক্সে মোদি-যোগীর লড়াইয়ের প্রভাব এই রাজ্যে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা।
[আরও পড়ুন: ‘ওঁরা কথা রাখে’, হ্যাম রেডিওর সাহায্যে ঘরে ফিরছে বাংলাদেশের মেয়ে]
গত নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৮০ টির মধ্যে ৬২টি আসন পায় গেরুয়া শিবির। মোদি হাওয়ার পাশাপাশি যোগীর জনপ্রিয়তা বিরোধীদের অনেকটাই পিছনের সারিতে ঠেলে দেয়। গেরুয়া শিবিরকে এগিয়ে দিতে সাহায্য করে বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থা। রাজ্যের সংখ্যালঘু ও দলিত ভোট ভাগাভাগির সুফল ঘরে তোলেন মোদি, শাহরা। এবার পরিস্থিতির বদল হয়েছে। প্রথমে মনে করা হয়, রাম মন্দির নির্মাণের সুযোগ পাবে পদ্মপক্ষ। কিন্তু সেই হাওয়ায় নেই। মোদি হাওয়া ফিকে হয়েছে। বিরোধীরা অনেকটাই জোটবদ্ধ। যদিও বহেনজি জোট থেকে দূরত্ব বজায় রেখে একলা চলার নীতি নিয়েছেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বেহেনজির ভোটব্যাঙ্কে এই ভোটে (Lok Sabha 2024) সুরক্ষিত থাকবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এখন বিজেপির ভরসা দলের সংগঠন ও মুখ্যমন্ত্রী যোগীর কৌশল। বাঘকে কুয়ো থেকে তোলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে যোগী আদিত্যনাথকে। কিন্তু কতখানি তুলবেন তা ঠিক করার দায়িত্ব তাঁর।
[আরও পড়ুন: চুরির চেষ্টা আটকানোর ‘শাস্তি’, গৃহকর্তাকে পিটিয়ে ‘খুন’ দুষ্কৃতীদের]
রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করার সময় থেকেই যোগীর সতর্ক অবস্তান চিন্তায় ফেলেছে গেরুয়া শিবিরকে। কারণ রাজ্যের অন্তত ১২ সাংসদকে বদলে নতুন মুখ আনার পক্ষে সওয়াল করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। এদের মধ্যে কিন্তু সহমত হননি মোদি-শাহরা। যেমন খেরি লোকসভা থেকে ফের প্রার্থী করা হয়েছে অজয় মিশ্র টেনিকেই। যাঁর বিরুদ্ধে লেখিমপুর খেরিতে আন্দোলনরত কৃষকদের গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের অভিযোগ রয়েছে। আবার একমাস আগে বেহেনজির দল বিএসপি থেকে যোগ দেওয়া রীতেশ পান্ডেকে আম্বেদকর নগর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। কাইজারগঞ্জ থেকে এবার প্রার্থী করা হয়েছে বিতর্কিত সাংসদ ব্রিজভূষণের ছেলে করণভূষণ সিংকে। একসময় রুপোলি পর্দার ড্রিম গার্ল হেমা মালিনীকে প্রার্থী করা নিয়ে আপত্তি ছিল যোগী আদিত্যনাথের। কিন্তু তাঁকেও ফের প্রার্থী করেছে বিজেপি। এরকম অনেকেই পদ্মছাপ নিয়ে ভোট ময়দানে রয়েছেন যাঁদের নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি ছিল বলে যোগী রাজ্যে কান পাতলেই শোনা যায়।
এখানে লড়াই ত্রিমুখী হলেও রাজনৈতিক কারবারিদের মত কিন্তু ভিন্ন। তাঁদের মতে, অনেক কেন্দ্র আছে যেখান লড়াই হবে চর্তুমুখী। এর মধ্যে যেটা চোখে দেখা যাচ্ছে না তা হলো মোদি ও যোগী অদৃশ্য লড়াই। এই লড়াইয়ে উদ্ধারকর্তা বাঘকে ডাঙায় তোলেন নাকি নিরাপদ দূরত্বে রেখে প্রাণ বাঁচান সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।