shono
Advertisement

জৌলুসহীন শ্রীকলোনির বাড়ি, না থেকেও রায়গঞ্জের ভোটে 'অভিভাবক' প্রিয়দা

Published By: Subhajit MandalPosted: 11:46 AM Apr 21, 2024Updated: 11:46 AM Apr 21, 2024

রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, রায়গঞ্জ: ভোট আসা মানেই কালিয়াগঞ্জের শ্রীকলোনির বাড়িটা গমগম করত। একটা সময় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি রায়গঞ্জে তাঁর এই বাড়িতেই লোকসভা (Lok Sabha 2024) থেকে বিধানসভা, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, প্রতিটি ভোটের রণকৌশল তৈরি করতেন জেলার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের নিয়ে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজনৈতিক নেতারা আসতেন পরামর্শ করতে তাঁদের প্রিয়দার সঙ্গে। কিন্তু সব কিছুই যেন আজ ইতিহাস। সব কিছুই শুনশান। প্রিয়রঞ্জন দাস মুন্সি নেই। একরাশ স্মৃতি আর শ্মশানের নিস্তব্ধতা নিয়ে কালিয়াগঞ্জের বুকে দাঁড়িয়ে আছে দাশমুন্সি ভবন।

Advertisement

তবে প্রিয়রঞ্জন (Priyo Ranjan Dasmunsi) না থাকলেও, তাঁর বাড়িতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করলেও জেলার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অভিভাবক হিসেবেই গেঁথে রয়েছেন তিনি। এবার লোকসভা ভোটেও প্রিয়কে স্মরণ করেই প্রচার শুরু করেছেন রায়গঞ্জে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী আলি ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর। আবার কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয়ে এখনও বড় বড় প্ল্যাকার্ডে উজ্জ্বল উপস্থিতি বিরাজ করছে প্রিয়রঞ্জনের।

[আরও পড়ুন: প্রকাশ্যেই স্মরণ করান ‘রাজধর্ম’, মরিয়া চেষ্টাতেও মোদিকে সরাতে পারেননি বাজপেয়ী! কেন?]

অনেক কম বয়স থেকেই শ্রীকলোনির এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল সুজিত দত্তর (Sujit Dutta)। বর্তমানে কালিয়াগঞ্জ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি তিনি। সুজিতবাবুর সঙ্গেই ঢুকলাম শ্রী কলোনির দাসমুন্সি বাড়িতে। বাড়ির সামনে পাঁচিল ঘেরা বড় জায়গা। বাঁ দিকে দুর্গা মন্দির। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি প্রয়াত হওয়ার আগে অসুস্থ হওয়ার সময় থেকেই আর পুজো হয় না। প্রতিমার পুরনো ভাঙা একটা কাঠামো পড়ে রয়েছে। বাড়িতে এলে যেখানে বসে দরবার করতেন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সেই চেয়ার রয়েছে। দেওয়ালের চারিদিকে সেই সময়কার কিছু ফটো অ্যালবামও রয়েছে। কিন্তু নেই শুধু তিনিই।

প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর শ্রীকলোনির বাড়ি।

প্রিয়রঞ্জনের স্মৃতি এখনও টাটকা সুজিত দত্তর কাছে। তিনি বলছিলেন, "আমি প্রিয়দার ঘরের ছেলে ছিলাম। প্রিয় দা এলে যেন হাট বসতো বাড়িতে। গোটা উত্তরবঙ্গ থেকেই মানুষ আসতেন। তাঁদের দেখাশোনা, খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব আমার উপর থাকতো। প্রিয়দার মতো নেতা আর কখনও পাব না। কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে খেতে বসলেও উঠে আসতেন প্রিয়দা।" আর দুর্গাপুজোর সময় তো বিরাট আয়োজন, হইচই হতো এই বাড়িতে। বলছিলেন এলাকারই প্রবীণ এক ব্যক্তি। স্থানীয় প্রবীণ কংগ্রেস কর্মীদের কথায়, "পুজোর সময় ভিভিআইপি অতিথিতে ভরে থাকত এই বাড়ি। তাঁর বাড়ির পুজোয় দুই বঙ্গ, দিল্লি, কলকাতা থেকে বহু লোক আসতেন। পুজোর চারদিন মিলন মেলায় পরিণত হতো এই বাড়ি। বরকত গনিখান চৌধুরী, ডালুবাবু, সবাই আসতেন। পুজোয় ষষ্ঠীর দিন কুড়ি-পঁচিশ হাজার মানুষের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিতেন প্রিয়দা।" বাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজানো থেকে শুরু করে স্ত্রী দীপা দাশমুন্সিকে সঙ্গে নিয়ে ধুনুচি হাতে আরতিও করতেন প্রিয়রঞ্জন। অষ্টমীতে সকলকে পাত পেড়ে খাওয়াতেন। অতিথি আপ্যায়নের যাবতীয় দিক তিনিই দেখভাল করতেন। দশমীতে জলসা হতো। কিন্তু এসব আজ অতীতের স্মৃতি মাত্র। তাই পুজো এলে আজও মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে শ্রীকলোনির বাসিন্দাদের।

[আরও পড়ুন: দূরদর্শনের গেরুয়াকরণে ‘স্তম্ভিত’ মমতা, কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি]

সালটা ছিল ২০০৮। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভার অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। তাঁর উপর দায়িত্বও ছিল অনেক। সেই সঙ্গে ছিল দলের একাধিক দায়িত্ব। ওই বছরই জুলাই মাসে মালদহে গনিখান চৌধুরির বাড়ি থেকে রায়গঞ্জে ফেরার পথেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রিয়রঞ্জনের রাজনীতিতে অভ্যুত্থান ছয়ের দশকে। কংগ্রেসের ছাত্র থেকে যুব সংগঠন হয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ও সেই সূত্রে এআইসিসিতে (AICC)। পাঁচ বার এ রাজ্য থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন। দু'দফায় মোট চারটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছিলেন। আবার টানা কুড়ি বছর এআইএফএফ (AIFF) সভাপতি। কংগ্রেসের রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্র ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। আর রায়গঞ্জ মানেই ছিল প্রিয়র গড়। এখনও নির্বাচনের সময় ফিরে আসছে প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর স্মৃতি। আজও জেলার বিভিন্ন দলের ভোট প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি মেন্টর হিসেবে রয়ে গিয়েছেন। তাই এবারও লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha 2024) প্রচার শুরু করে ডান-বাম সব প্রার্থীরাই তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করেছেন। দীর্ঘদিন কোমায় থাকার পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর প্রয়াত হন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এখন দিল্লিতে থাকেন। চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই রায়গঞ্জের এই বাড়িতে এসেছিলেন। ছেলে প্রিয়দীপ দাশমুন্সি, ডাক নাম মিছিল, লন্ডনে থাকে। বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে রয়েছেন সঞ্জিত সিং। বাড়ির আনাচে কানাচে আগাছার বারবাড়ন্ত, পুরু ধুলোর আস্তরণ মন্দির চাতালে। অতীতের সেই স্মৃতি বুকে নিয়েই আজও দাঁড়িয়ে আছে শ্রীকলোনির এই বাড়ি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement