বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তরের তিন আসনে 'জন ফ্যাক্টর' নিয়ে চিন্তায় গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী জন বারলার মুখে মোদি বন্দনা থাকলেও তাঁর অনুগামীদের গতিবিধি ঘিরেই সন্দেহ বাড়ছে বিজেপি মহলে। ওই অনুগামীদের বড় অংশ ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা বলয়ে বিজেপির ভোট ভাঙতে মরিয়া অভিযানে নেমেছে বলেও দলের অন্দরে খবর পৌঁছেছে। বিষয়টি দলের রাজ্য নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষককে জানানো হলেও প্রকাশ্যে নেতৃত্বের কেউ মুখ খুলছেন না। তবে জন বারলার অনুগামীদের তৎপরতা ঘিরে যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে সেটা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করছেন তারা।
গত লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জয়লাভ করেন বিজেপি প্রার্থী জন বারলা। এর পরই তিনি মন্ত্রী হন। কিন্তু এবার টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দলের বিরুদ্ধে একরকম বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেন। অবশেষে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ফোন পেয়ে সুর নরম করে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় হাজির হন। প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন দলের প্রচারে আছেন। দলের নির্দেশ মেনেই কাজ করবেন। কিন্তু বারলা সুর নরম করলেও তাঁর অনুগামীদের বিদ্রোহ এতটুকু কমেনি। গয়েরকাটা চা বাগানে জন বার্লার সমর্থনে পোস্টার পড়ে।
[আরও পড়ুন: ‘মোদিতে হচ্ছে না, ঠাকরে চুরি করছে…’ রাজ-শাহ বৈঠকের পরই বিজেপিকে খোঁচা উদ্ধবের]
সোমবার মেটেলির ইন্ডং চা বাগানে অনুগামীরা বিক্ষোভ দেখায়। বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীপাড়া, বিন্নাগুড়ি, হলদিবাড়ি, বীরপাড়া, তাসাটি, বানারহাট চা বাগান-সহ ডুয়ার্স ও তরাইয়ের আদিবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় হয়েছে ওরা। ডুয়ার্সের চা-বলয়ে আটটি বিধানসভা এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি আলিপুরদুয়ার জেলা এবং তিনটি জলপাইগুড়ি জেলায়। তরাইয়ের চা বলয়ে রয়েছে দুটি বিধানসভা এলাকা ফাঁসিদেওয়া এবং নকশালবাড়ি-মাটিগাড়া। এখানে ফলাফল নির্ণয়ে আদিবাসী ভোট বড় ফ্যাক্টর। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বামেদের সাফ করে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার আসন বিজেপি দখল করে। দার্জিলিং আসনও ঝুলিতে তুলে নেয় পদ্ম শিবির। সেবার প্রতিটি আসনে বিজেপির প্রচারের অন্যতম মুখ ছিলেন জন বারলা। এবার তাকে টিকিট না দেওয়ার ক্ষোভে ফুসছেন অনুগামীরা।
অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি বারলা প্রভাবিত এলাকায় ঘুরে তাঁরা টিকিট না দেওয়ার বদলা নেওয়ার কথা বলছে। কি সেই বদলা? নাম না-প্রকাশের শর্ত রেখে বিজেপির এক পুরনো নেতা জানান, পদ্মফুলে ভোট না দেওয়ার কথা বলছে ওরা। প্রধানমন্ত্রীর সভার পর ওই তৎপরতা বেড়ে যায়। বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জানানো হলে শনিবার জন বারলাকে দিল্লিতে ডেকে নেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সেখানে দু'জনের মধ্যে কথা হয়। কিন্তু কী কথা হয়েছে জানা যায়নি। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে। যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও জন বারলা ফোন ধরেননি। রাজনৈতিক মহলের মতে আপাতত জন বারলা বাহিনীর বিদ্রোহ বন্ধ করতে দলের তরফে কিছু প্রস্তাব রাখা হতে পারে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে বারলা কতটা সন্তুষ্ট হবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে এমন হতেই পারে জন বারলা নিজে চুপ থেকে কৌশলে অনুগামীদের বিদ্রোহ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দলের উপরে চাপ জিইয়ে রাখলেন। কারণ, তিনি ভালো জানেন মনোজ টিগগা আলিপুরদুয়ার আসনে জয়লাভ করে উঠে এলে তার নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অনেকটাই বিপন্ন হবে। ওই কারণে আলিপুরদুয়ারের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রেও আদিবাসী সমাজে নিজের প্রভাব প্রমাণের ছক তৈরি হয়েছে।
[আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও ১, এবার পুলিশের জালে জমির মালিক]
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শ্যামচাঁদ ঘোষ অবশ্য "ওই বিষয়ে কিছুই জানি না" বলে প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন। তিনি উলটে দাবি করেন, "সর্বভারতীয় দল। কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। সবই সময় মতো আলোচনার টেবিলে মিটে যাবে। প্রত্যেকে দলের জন্য লড়াই করবেন।"