রমেন দাস: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাতারাতি হয়ে ওঠেন ‘ভগবান’। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ‘মসিহা’। বর্তমানে বিচারপতির আগে জুড়েছে প্রাক্তন তকমা। এখন তিনি বিজেপি নেতা। তাঁর সিদ্ধান্তে হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁর সিদ্ধান্তে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতীর আশাভঙ্গ হয়েছে, বলছেন শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর (Dipsita Dhar)।
শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে একান্ত সাক্ষাৎকারে দীপ্সিতা আরও বলেন, "যেকোনও মানুষ নির্বাচনে লড়তেই পারেন। বিচারপতির আসন ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বহু যুবক-যুবতীর আশাভঙ্গ করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যিনি এতদিন বড় বড় কথা বললেন। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থায় ধাক্কা তো খাবেই।" মার্চের প্রথম সপ্তাহেই বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ হিসাবে দাবি করেন সিপিএম ধর্ম মানে না। আর উনি ভগবানে বিশ্বাসী। তাই বিজেপিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত বলেই দাবি করেন। প্রাক্তন বিচারপতির এহেন দাবির বিরোধিতা করেন দীপ্সিতা। তাঁর মতে, "আসলে ধর্ম মানে আমরা কী বুঝি? মানুষের পাশে থাকা ছাড়া বড় ধর্ম হয়? যাঁরা মানুষের জন্য কিছু করেন না, চোরেদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে ধর্ম নিয়ে জ্ঞান শুনব না।"
[আরও পড়ুন: ‘রচনাদিই জিতুন’, জগন্নাথ দেবের কাছে প্রার্থনা ‘দিদি NO 1’ প্রতিযোগী চপ বিক্রেতা উমার]
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে গোটা রাজ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা আশায় নতুন করে বুক বাঁধতে শুরু করেন। একদিন না একদিন সুবিচার পাওয়া যাবেই, দুচোখে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিচারপতি হিসাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেছিল সিপিএমও। রাতারাতি 'মসিহা' অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে এক সময় সমর্থন প্রসঙ্গে কী বলছেন দীপ্সিতা? তাঁর যুক্তি, "আমরা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তাঁর জাজমেন্টের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যক্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।"
সন্দেশখালি কাণ্ড নিয়েও মুখ খোলেন দীপ্সিতা। তাঁর মতে, "মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটু মানবিক, সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত ছিল। বামেদের আমলে নারী নির্যাতন হলে ব্যবস্থা হোক।" শ্রীরামপুরে এখনও প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি বিজেপি। সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতার মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের একান্ত সাক্ষাৎকারে কল্যাণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। বলেন, "আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ খতিয়ান চান। সাংসদ হিসাবে কী করেছেন না করেছেন তার খতিয়ান চান সাধারণ মানুষ। আমার মনে হয় সাংসদের দায়িত্ব পূরণ করেননি কল্যাণবাবু। ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনও জায়গা নেই। শুভেচ্ছা জানাই।"
জয়ের বিষয়ে একশো শতাংশ আশাবাদী দীপ্সিতা। তাঁর মতে, "মানুষের মনের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ দেখেছি। অনেকেই বলেছেন তোমাদের ভোট দিতে চাই। ভোটটা যেন ওরা লুট করতে না পারেন। ব্যালট ছিঁড়ে, খেয়ে ফেলে জনমত ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে বাঁচানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জনমত পেশিবলে লুট করে নিচ্ছে। এর চেয়ে খারাপ কিছু হয় না। এই ভোট গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই।" আত্মবিশ্বাসী দীপ্সিতা মেগা নির্বাচনী যুদ্ধে (Lok Sabha 2024) কেমন ফল করেন, সেটাই দেখার।
[আরও পড়ুন: কপালে স্টিচের ব্যথা কেমন? মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে কালীঘাটে ৩ চিকিৎসক]
দেখুন ভিডিও: