সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনীতিক মানেই সর্বদা রাশভারী, কম কথা বলা কিংবা কাটখোট্টা ভাষায় নিজের দলের বুলি আউড়ে ভোট প্রার্থনা করা নেতানেত্রীই যে নয়, তা তো বাংলার রাজনীতিকদের দেখলেই বোঝা যায়। এ বঙ্গে রাজনৈতিক রং এবং রঙ্গ কম নেই। কেউ রাজনীতির ফাঁকে ফাঁকে চুটিয়ে শুটিং, রিলস করছেন তো কেউ জনসংযোগ ফুরিয়ে গেলেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুবৃত্তে রঙিন সময় কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নয়ত রকমারি পোশাকে ফটোশুট আর সোশাল মিডিয়া পোস্টে ডুবে থাকেন। বাংলার শাসকদল তৃণমূলেই এমন জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কত। সে দীর্ঘ তালিকার কথা থাক। বরং এই মুহূর্তে ঘাসফুল শিবিরের দুই রঙিন এবং জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে নজর কাড়ছেন জোড়া MM. মদন মিত্র ও মহুয়া মৈত্র। ভাবছেন, দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য কোথায়? আছে বইকী। একজন যেমন রসিক, অন্যজন তেমনই মুখরা। তবু দুজনেই বেশ রসেবশে থাকা ব্যক্তিত্ব।
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের সময়ে আরবের শেখ রূপে মদন মিত্র।
মদন মিত্রের (Madan Mitra) জনপ্রিয়তা, সক্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। সারা বছর ধরে রাজনীতির ফাঁকে ফাঁকেই গান, অ্যালবাম, শুটিংয়েও যথেষ্ট সময় দেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA)। আর ভোটের সময় 'ওহ লাভলি' বা 'মোদি-শাহ/কুমড়োর ঘ্যাঁট খা'র মতো গান গেয়ে তিনি নিজেই প্রচারে অভিনবত্ব নিয়ে আসেন। কখনও রঙিন রোদচশমা সুইমিং পুলের আরামে, কখনও সাবেকি ধুতি-পাঞ্জাবিতে বাঙালিবাবু আবার কখনও শর্টস-টিশার্টে পুরোদস্তুর স্পোর্টসম্যান। মদন মিত্রকে এমন নানা রূপে দেখেননি, এমন মানুষ কমই। আবার নির্বাচনে কিন্তু নিজের ভোটব্যাঙ্ক একেবারে জনসমর্থনে ভরিয়ে দিতেও সফল তৃণমূলের এই বিধায়ক। শুধু তৃণমূলই নয়, বঙ্গ রাজনীতিতে বৈচিত্র্য ভরা এক ব্যক্তিত্ব MM অর্থাৎ মদন মিত্র।
নানা সাজে মদন মিত্র।
কিন্তু বেশ কয়েকমাস ধরে এহেন রঙিন ব্যক্তিত্বকে আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। মদন মিত্র অসুস্থ। কখনও হাসপাতালে, কখনও বাড়িতে পুরোপুরি বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। চব্বিশের ভোট ময়দানে (Lok Sabha Election 2024) রকমারি বেশে, অভিনব প্রচারে এখনও তাঁকে সেভাবে দেখা যায়নি। দলীয় প্রার্থীদের হয়ে কি আর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট চাইতে নামবেন না কামারহাটির বিধায়ক? এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: SSC মামলা: প্যানেল বাতিল হলেও বহাল বীরভূমের সোমা দাসের চাকরি, কোন যুক্তিতে?]
মদন মিত্র একাই কি প্রচারের সমস্ত রং ধরে রাখবেন? মোটেই নয়। ঘাসফুলের শক্তির উৎস MM অর্থে মদন মিত্র হলে আরেক MM-ও আছেন। তিনি মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। চরিত্রগত দিক থেকে একেবারে মদনের উলটো হলেও কৃষ্ণনগরের ভূমিকন্যা তথা বহিষ্কৃত সাংসদ ও এবারের তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) কোনও অর্থে কম রঙিন নন। তিনি সুন্দরী, তেজি, স্মার্ট,কেতাদুরস্ত। নিন্দুকরা কেউ কেউ অহংকারী বলতেও কসুর করেন না।
দামী সানগ্লাস, ফোন হাতে সংসদে ঢুকছেন মহুয়া মৈত্র। ফাইল ছবি।
সংসদে যুক্তিপূর্ণ, ঝরঝরে ইংরাজিতে বক্তৃতায় ঘায়েল করেন ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের। বিতর্কসভায় তাঁকে টেক্কা দেওয়া মুশকিল। আবার অপছন্দ হলে কটূ বাক্যবাণে বিঁধতেও ছাড়েন না কাউকে। '২ পয়সার সাংবাদিক' বলে বিতর্কে জড়ানো থেকে সংবাদমাধ্যমের বুম উপেক্ষা করে হুশ করে বেরিয়ে যাওয়া কিংবা টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানি বিরোধী প্রশ্ন তোলার অভিযোগে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার পরও মহুয়ার 'ডোন্ট কেয়ার' ভাব কিন্তু অনমনীয়। কিছুর তোয়াক্কাই করেন না। অথচ মহুয়ার জনপ্রিয়তাও কিছু কম নয়। করিমপুরের বিধায়ক থেকে কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) সাংসদ - নির্বাচনী ফলাফলে ঝুলি উপচে পড়া জনসমর্থন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে মহুয়ার জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে বলে মনে করেন অনেকেই। কৃষ্ণনগরের মাটি থেকে সোজা দিল্লির দরবারে ঝাঁজালো প্রতিনিধি হিসেবে এই MM-এও তৃণমূলের ভরসা ভালোই। এখন এই MM ম্যাজিকে ঘাসফুলের কতটা বাড়বাড়ন্ত হয়, সেটাই দেখার।
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থীর ফ্যাশন সেন্স দুর্দান্ত! ফাইল ছবি।