সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মনোনয়ন পর্ব শেষে পুরুলিয়া কেন্দ্রে মোট ১২ প্রার্থী। কিন্তু ডজন খানেক প্রার্থী থাকলেও বহু বছর পর পুরুলিয়া কেন্দ্রে লড়াই এবার চতুর্মুখী। আর এই চতুর্মুখী লড়াইয়ে এই কেন্দ্রের একটা বড় অংশের ভোটার একেবারে 'সাইলেন্ট' হয়ে রয়েছে। আর এটাই ভাবিয়ে তুলছে এই কেন্দ্রের দখলে থাকা বিজেপিকে। চিন্তায় শাসক দল তৃণমূলও। এদিকে কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো এই কেন্দ্রে বিজেপিকে ব্যাপক চাপে ফেলে দিয়েছে। কারণ উনিশের নির্বাচনে অধিকাংশ কুড়মি ভোট পদ্মে পড়ে। তাই কুড়মি ভোট কাটতে বিজেপি কৌশলি চালে নির্দল থেকে অজিতকুমার মাহাতো নামে একজনকে প্রার্থী করে বলে জেলার রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য। যাতে একই নাম হওয়ায় কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোর ভোট কাটা যায়। এমন কথা বলছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি কুড়মি ভোট কাটার অঙ্ক কষলেও গেরুয়া শিবিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের কোনও সমস্যা হবে না। কুড়মি ভোট কাটার নিরিখে বিজেপির ভোট অঙ্ক যদি সঠিকও হয় তাহলে ২০১৯-এ বিজেপির পক্ষে থাকা সেই কুড়মি ভোট অজিতপ্রসাদ মাহাতোর কাছে না গিয়ে অজিতকুমার মাহাতোর কাছে যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ভোট কাটাকাটির সমীকরণে ক্ষোভ থেকেই গেরুয়া শিবির এই চাল চেলেছে।
[আরও পড়ুন: ‘আমরা হস্তক্ষেপ করব না’, কেজরির মুখ্যমন্ত্রী পদ কাড়ার দাবি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে]
ইভিএমে এক নম্বরে রয়েছেন পদ্ম চিহ্নে জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। দু'নম্বরে সিংহ ছাপে ফরওয়ার্ড ব্লকের ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিন নম্বরে হাত ছাপে কংগ্রেস প্রার্থী নেপালচন্দ্র মাহাতো। চার নম্বরে জোড়াফুলে শান্তিরাম মাহাতো। কুড়মি প্রার্থী নির্দলের অজিতপ্রসাদ মাহাতো রয়েছেন আট নম্বরে। ঠিক এর পরেই নয় নম্বরে নির্দলের অজিতকুমার মাহাতো। প্রতীক টিলার। কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতোর প্রতীক বালতি। এ প্রসঙ্গে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) তথা কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, "বিজেপি যদি মনে করে যে তারা ব্যাপক রাজনৈতিক কৌশলি চাল চেলেছে তা একেবারেই ভুল। বালতি প্রতীকে সব ভোট আমরা নিয়ে পুরুলিয়া কেন্দ্রে এবার ইতিহাস গড়ব।" কুড়মি কাঁটা বিজেপিকে প্রথম থেকে চাপে রাখলেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে চাইছে না পুরুলিয়া জেলা বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, "সামাজিক সংগঠন আলাদা রাজনৈতিক দল আলাদা। ভোটের ফলাফল তা বুঝিয়ে দেবে। "
এই কেন্দ্রে এবার একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চার প্রার্থীর। বিজেপিকে ঘিরে উনিশের সেই রামচন্দ্রের আবেগ নেই। তাছাড়া বিজেপির পক্ষে থাকা সেবারের একাধিক ইস্যু এবার ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংসদের সেভাবে কাজ না করা। বা তাঁকে এলাকায় দেখতে না পাওয়া। অন্যদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এই কেন্দ্রের সহজ- সরল প্রার্থী শান্তিরাম সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া সাংগঠনিকভাবেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে শাসক দল জেলায় নিজেদেরকে খানিকটা গুছিয়ে নিয়েছে।
[আরও পড়ুন: লাইন ভেঙে এগিয়ে গেলেন বিধায়ক! প্রতিবাদ করতেই চড়, পালটা দিলেন আক্রান্ত ভোটারও]
অন্যদিকে বাম সমর্থিত কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো বিজেপি- তৃণমূলের বিকল্প হয়ে উঠে এসেছেন। উনিশে 'ইয়ং জেনারেশন'-র যে ভোট গেরুয়া শিবিরে পড়েছিল। এবার সেই ভোট বিকল্প শক্তির খোঁজে নেপাল মাহাতোর পক্ষে পড়বে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। তাছাড়া কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর প্রচারেও সেই ছবি ধরা পড়ছে। সেই সঙ্গে উনিশে সিপিএম এবং কংগ্রেসের যে ভোট বিজেপিতে চলে গিয়েছিল তারা তা ফিরিয়ে এনেছেন। গত পঞ্চায়েতে তার প্রমাণ মেলে। ফলে বিজেপি, তৃণমূলের মত লড়াইয়ে কংগ্রেস প্রার্থীও। একইভাবে এই লড়াইয়ে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ছেন না কুড়মি প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তাঁর প্রধান ভরসা এই কেন্দ্রে ৩৫ শতাংশ কুড়মি ভোট। সেই সঙ্গে হিতমিতান অর্থাৎ তাদের সহযোগী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ভোটও। সবে মিলিয়ে চতুর্মুখী লড়াই-এ ক্রমশ চাপ বাড়ছে পদ্ম থেকে শাসক শিবিরে।