অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: রাজনীতির সঙ্গে আর যাই হোক, মিষ্টির সম্পর্ক কিন্তু খুব একটা কাছের নয়। সবসময়ে একে অপরের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত থাকা নেতারা কি আর মিষ্টির স্বাদগ্রহণের মতো অবস্থায় থাকেন? নির্বাচনী ব্যস্ততার মাঝে তা বিশেষ আশাও করা যায় না। কিন্তু রাজনীতি আর রসনার মেলবন্ধনের মতো বিরল কাজটাই করতে নেমেছেন হাওড়ার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। বার্তা দিচ্ছেন, রাজনীতি মানে হিংসা নয়। রাজনীতি মানে মানুষে মানুষে মিষ্টি সম্পর্কও তৈরি। আর এই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই হাওড়া ময়দানের কাছে এক মিষ্টির দোকান তৈরি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক সম্বলিত সন্দেশ। ভোটের মুখে তা বিকোচ্ছেও হু হু করে।
সন্দেশে আঁকা পদ্ম, জোড়াফুল, কাস্তে-হাতুড়ি-তারা। নিজস্ব ছবি।
গোটা দেশজুড়ে লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) দামামা বেজে গিয়েছে। দুদফা ভোটের পর তৃতীয় দফার ভোটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। ব্যতিক্রম নয় হাওড়া (Howrah)। কলকাতার যমজ শহর হাওড়ায় আগামী ২০ মে ভোট। কিন্তু তার আগে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীরা ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ভোট মানে গণতন্ত্রের উৎসব। আর বাঙালির কাছে মিষ্টি (Sweets) ছাড়া উৎসব? ভাবাই যায় না। তাই ভোটের আগে সব দলের কর্মীদের জন্য হরেকরকম মিষ্টি তৈরি করেছেন দোকান মালিক। ওই দোকানে পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রতীকের সন্দেশ। প্রতি সন্দেশের দাম ১০০ টাকা। কড়া পাকের সন্দেশের উপর কোনওটায় রয়েছে পদ্মফুল, কোথাও জোড়াফুল, কোথাও আবার কাস্তে-হাতুড়ি-তারা।
[আরও পড়ুন: এভাবেও ফিরে আসা যায়! চারবারের ব্যর্থতা ভুলে UPSC-তে সফল শ্রীরামপুরের মেয়ে]
প্রচারের ফাঁকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী এবং কর্মীরা ঢুঁ মারছেন হাওড়া ময়দানের কাছে ওই মিষ্টির দোকানে। নিজেরা সন্দেশ খাচ্ছেন এবং অন্যদেরও খাওয়াচ্ছেন। মিষ্টির দোকানের মালিক সৈকত পাল জানিয়েছেন, "রাজনীতি মানে হিংসা নয়। মানুষের সম্পর্কের মধ্যে মিষ্টত্ব বাড়াতে এই ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলেরই পছন্দ মতো মিষ্টি তৈরি করা হয়েছে। নেতা ও কর্মীরা নিজেরাও খাচ্ছেন এবং অন্যদের খাওয়াচ্ছেন।" তবে এসবের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশ বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতা।
[আরও পড়ুন: ‘লজ্জা হওয়া উচিত’, শ্লীলতাহানি ইস্যুতে রাজ্যপালকে CCTV ফুটেজ চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
রবিবার সকালে বিজেপি (BJP) নেতা তথা হাওড়া শহরের প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে দেখা গেল দোকানে। তিনি নিজেও পদ্মফুল প্রতীক সম্বলিত সন্দেশ খেলেন এবং কর্মীদের খাওয়ালেন। রথীনবাবুর কথায়, "বাংলার ঐতিহ্যবাহী সন্দেশের মধ্যে একটি সন্দেশ আছে। এটা সন্দেশখালির রোদন ভরা সন্দেশ নয়। এই সন্দেশ মানুষে মানুষে সম্পর্ককে মিষ্টি করে। হাওড়ায় মেট্রো রেল-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এখানকার মানুষকে উন্নয়নের বার্তা দিতে চাইছেন। সেদিন খুব দূরে নেই যে পদ্মফুল মিষ্টি গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়বে।"
পদ্মপ্রতীকের সন্দেশ জনপ্রিয় হলেও সবচেয়ে বেশি বিকোচ্ছে ঘাসফুল আঁকা সন্দেশ, দাবি বিক্রেতার।
মধ্য হাওড়ার যুব তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সভাপতি অভিষেক চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের দলের সন্দেশের বেশি বিক্রি দেখে বেশ ভালো লাগছে। জোড়া ফুল প্রতীকের সঙ্গে কর্মীদের একটা আবেগের সম্পর্ক আছে। তাই কর্মীরা এখানে এসে মিষ্টি খাচ্ছেন এবং খাওয়াচ্ছেন। ভোট মানে তো উৎসব। তাই এই ধরনের মিষ্টির আলাদা গুরুত্ব আছে দলীয় কর্মীদের কাছে।" ভোটের আগে হাওড়া মজেছে নতুন রাজনৈতিক মিষ্টিতে। এখন দেখার এই সন্দেশ কীভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করে।
দেখুন ভিডিও: