shono
Advertisement
Lok Sabha Election Result 2024

যাদবপুর নিজের সায়নীকেই চাইল, 'সৃজন'শীল লড়াই করেও 'থার্ড বয়' বামেরা

যাদবপুরে বামেরা যে দুর্গ হারিয়েছে তার দরজা সহজে যে খুলবে না আরও একবার বুঝিয়ে দিল মানুষ।
Published By: Suparna MajumderPosted: 05:24 PM Jun 04, 2024Updated: 10:36 PM Jun 04, 2024

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদা ছিল বামদুর্গ। সে দুর্গের পতন হয়েছে বহুদিন। বন্ধগড়ে বহুদিন বাদে ক্ষীণ একটা আশার আলো হয়ে ফুটে উঠেছিলেন সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan Bhattacharyya)। প্রথম হতে না পারলেও অন্তত দ্বিতীয় হবেন। এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন বামেরা। যাদবপুর পুনরায় দেখাল, বামেদের প্রত্যাখ্যানের রীতি সেখানে অব্যাহতই আছে। দ্বিতীয় হওয়া তো দূরের কথা বরং অনির্বাণ-চমকে সৃজন গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তৃতীয় স্থানে।

Advertisement

ছবি: সংগৃহীত

 

যাদবপুর কেন্দ্রে এবারে সায়নী ঘোষের (Saayoni Ghosh) জয় নিয়ে খুব একটা সংশয় ছিল না। তবে, লড়াইটা কঠিন ছিল। খোদ সায়নী স্বীকার করেছিলেন যে, যাদবপুরে অনেক কাজই বাকি থেকে গিয়েছে। তার উপর আগের বার একজন অভিনেত্রীই সাংসদ হয়েছিলেন। যাদবপুরের মানুষ তাঁকে খুব যে কাজের সময় পেয়েছেন, তা নয়। ফলত ক্ষোভ খানিকটা জমেই ছিল। সায়নীর লড়াই ছিল সেই পারসেপশন বদলানো। অভিনেত্রী থেকে তিনি এখন যুবনেত্রী। অতএব তিনি যে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ, তা যাদবপুরের মানুষের কাছে তুলে ধরাই ছিল তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য। সে কাজটি তিনি সুচারু ভাবেই করেছেন।

যে সায়নী শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরানোর ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, সেই সায়নী এবারে শিবলিঙ্গ পুজো করেই প্রচারের ময়দানে নামেন। বারুইপুর থেকে সোনারপুর, যাদবপুর থেকে টালিগঞ্জ কিংবা ভাঙড়, কোন জায়গা বাদ দেননি অভিনেত্রী। একেবারে বাড়ির মেয়ের মতো সকলের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। কখনও মাছবাজারে গিয়ে মাছ কিনেছেন, আবার চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে দিব্যি ডিম টোস্ট তৈরি করেছেন। মন্দিরে দাঁড়িয়ে গড়গড় করে পাঠ করেছেন 'হনুমান চালিশা'। বিধায়কের লড়াই লড়তে গিয়ে একবার হারতে হয়েছিল তাঁকে। এবার তাই দ্বিগুণ পরিশ্রমেই ফেরার তাগিদ ছিল সায়নীর। সে পরিশ্রমের ফল মিলেছে। ফলত জয়ের পথে তেমন কাঁটা আর পেরোতে হয়নি তাঁকে।

ছবি: ফেসবুক

[আরও পড়ুন: রাজনীতির ‘নেপোকিড’ কুপোকাত, ‘সেনার মতো মান্ডিকে রক্ষা করব’, জিতেই প্রতিজ্ঞা ‘ক্যুইন’ কঙ্গনার]

তবে রাজনৈতিক আগ্রহের বিষয় ছিল যাদবপুরের দ্বিতীয় জায়গাটি নিয়ে। বামেদের বাজি ছিলেন সৃজন। তরুণ মুখ। ছাত্র সংগঠন করে উঠে আসা নেতা। চমৎকার কথা বলেন। মার্জিত-শিষ্ট ব্যবহার। সবার উপরে তিনি ঘরের ছেলে, এবং পরিচিত মুখ। অনেকগুলো ফ্যাক্টর একসঙ্গে কাজ করছিল। তরুণ সৃজনের জয়ের জন্য প্রাণপাত করেছিলেন বামকর্মীরাও। ফলত বামশিবির তো বটেই, বাম মনোভাবাপন্ন অনেকেও ভেবেছিলেন সৃজন তাঁর নিজস্ব ব্যক্তিত্বেই অনেকটা ভোট টানবেন। উলটে তাঁকে দেখে অতীতে বামেদের যে ভোট সরে গিয়েছিল, তা আবার লাল প্রতীকেই ফিরে আসবে। আর একটি সম্ভাবনাও এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল। বিজেপির হয়ে যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেই অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় অনেকাংশে 'তাত্ত্বিক' নেতা হিসাবেই পরিচিত। সেই দিক থেকে সৃজন খানিকটা অ্যাডভান্টেজে থাকবেন এমনটা ভেবে নিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা।

কিন্তু বিশ্লেষকদের ধ্যানধারণা এক, আর ভোটের বাস্তব আর-এক। মনে করা হয়েছিল, যাদবপুরের খেলা ঘোরানোর কাণ্ডারি হবে ভাঙড়। সেখানের ভোট ভাগভাগির উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তবে শুধু ওই এক জায়গার উপর ভোটের ফল নির্ভর করে না, তা বুঝিয়ে দিল যাদবপুর। সৃজনের দৌলতে যাদবপুরে বামেদের হাল ফিরবে মনে করা হয়েছিল। কার্যত দেখা গেল, যাদবপুর বামেদের বিকল্প হিসাবে বিজেপিকেই বেছে নিয়েছে। ফলত অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় উঠে এসেছেন দ্বিতীয় স্থানে। 'সৃজন'শীল প্রচারেও বামেদের এবারও থেমে যেতে হয়েছে তৃতীয় স্থানেই।

 

সায়নী সংসদে যাবেন। রাজ্যের তরুণ রাজনীতিবিদ। তাঁর সংসদে যাওয়া নিশ্চিত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি একই আশা ছিল সৃজনের জন্যেও। তাঁর মতো বাম তরুণ তুর্কি সংসদে যাক, চেয়েছিলেন বামমনোভাপন্ন অনেকেই। তবে যাদবপুরে যে দুর্গ হারিয়েছে বামেরা তার দরজা সহজে যে খুলবে না আরও একবার বুঝিয়ে দিল সেখানকার মানুষ। অতএব সায়নীর হাতে সংসদের ছাড়পত্র আর সৃজনের হাতে পেনসিল, থুড়ি সামনের পাঁচ বছর।

[আরও পড়ুন: ভালোবাসায় ঘাটাল জিতে দেব জিতিয়ে দিলেন রাজনীতির সৌজন্যকেই]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বন্ধগড়ে বহুদিন বাদে ক্ষীণ একটা আশার আলো হয়ে ফুটে উঠেছিলেন সৃজন ভট্টাচার্য।
  • প্রথম হতে না পারলেও অন্তত দ্বিতীয় হবেন। এমন আশায় বুক বেঁধেছিলেন বামেরা।
  • যাদবপুর পুনরায় দেখাল, বামেদের প্রত্যাখ্যানের রীতি সেখানে অব্যাহতই আছে।
Advertisement