কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: দু’জনেরই প্রতীক চিহ্ন 'পেনের নিব'। আর সেই ‘পেনের নিব’ না চালানোর ভুলের মাশুল গুনতে হল মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভার সর্বভারতীয় আর্য মহাসভার দুই প্রার্থীকে। একটি প্রশ্নের উত্তরে পেন দিয়ে একজন ‘নো’ লিখতে ভুলে গেলেন। আর এক প্রার্থী নিজের স্ত্রীর প্যান কার্ড নম্বর লিখতে ভুলে গেলেন। যে ভুলের কারণে ওই দুই আর্য মহাসভার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন।
ঘটা করে লোক-লস্কর নিয়ে এসে বহরমপুরের জেলা প্রশাসনিক ভবনে তিনটি লোকসভার মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল সর্বভারতীয় আর্য মহাসভা। আর্য মহাসভার বহরমপুর লোকসভার প্রার্থী সোমনাথ পালের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হলেও মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুর লোকসভার দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করল নির্বাচন কমিশন। সামান্য ভুলের কারণেই তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আর্য মহাসভার ওই দুই প্রার্থী। এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভার আর্য মহাসভার প্রার্থী মনীষ আমির বলেন, তাঁর মনোনয়নপত্রের ২ নম্বর ফর্মে একটি প্রশ্ন ছিল ‘আপনার নামে কোনও মামলা আছে কি?’ নিজের নামে কোনও মামলা না থাকায় ওই জায়গাটি ফাঁকা রেখেছিলেন মনীষ আমীর। আর তাতেই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন ওই প্রার্থী। মনীষ বলেন, ‘‘ওই ফাঁকা জায়গায় নো লেখা উচিত ছিল। কিন্তু আমার উকিলের আর পেন চলল না। সেই কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেল।’’
[আরও পড়ুন: ভোটের আগে রক্তাক্ত খাস কলকাতা, পিটিয়ে খুন তৃণমূল কর্মীকে!]
যখন তাঁকে জানানো হল, তখন আর ভুল শোধরানোর সময় ছিল না বলে অভিযোগ করেন মনীষ আমীর। বহরমপুরের বাসিন্দা পেশায় মাছ ব্যবসায়ী মনীষ আমীর তীব্র দাবদহ উপেক্ষা করে ভোট প্রচার করিয়ে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন বিধানসভায়। দেওয়াল লিখনও হয়েছে পকেটের পয়সা খরচ করে। ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু, ‘সেই ভাগ্য আর হলো না’ বলে আক্ষেপ করলেন মনীষ আমির। অন্যদিকে জঙ্গিপুর লোকসভার আর্য মহাসভার প্রার্থী প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বস্ত্র ব্যবসায়ী। সেই প্রতীকবাবুর প্রতীক ছিল ‘পেনের নিব’। তিনিও তাঁর হলফনামায় ‘পেন’ চালাতে ভুল করেছেন। নিজের স্ত্রীর প্যান কার্ড থাকা সত্ত্বেও লিখতে ভুলে গিয়েছেন বলে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এমনটাই অভিযোগ প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এদিন প্রতীকবাবু বলেন, ‘‘প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ভোটের বিভিন্ন প্রচার কার্যে। নিজ বাড়ি খড়গ্রাম থানার শেরপুর এলাকা-সহ বিভিন্ন ব্লকে দেওয়াল লিখনও হয়েছিল। সবই জলে গেল।’’ যে ‘পেনের নিব’ প্রতীক চিহ্ন নিয়ে তিনি লড়াই করছেন সেই ‘পেনের নিব’ যে ‘বেইমানি’ করবে, সেটা ভাবতেও পারেননি বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতীক। অন্যদিকে সর্বভারতীয় আর্য মহাসভার জেলা সভাপতি মোহনলাল রশিদ বলেন, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভার আর্য মহাসভার দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার কারণে সেখানে কাকে সমর্থন করা হবে সে বিষয়ে আগামী সোমবার বহরমপুর জেলা কার্যালয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে।