যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে পৃথিবী৷ প্রকৃতির রোষও ক্রমে বাড়ছে। সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের লোভ ও লালসা। চলতি বছর যেমন প্রকৃতির রোষের মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বকে, তেমনই ক্ষমতা ও দম্ভের মোহে মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে মানুষ-ই৷ বারবার বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প৷ বছর শেষে সেসব ঘটনাই ফিরে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
১. ইজরায়েল-হামাস সংঘাত: ৭ অক্টোবর। ইজরায়েলের বুকে বেনজির হামলা চালায় প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র সংগঠন হামাস। প্রাণ হারান অন্তত দেড় হাজার মানুষ। ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজা ভূখণ্ডে নিয়ে যায় হামাস। তারপরই অপারেশন ‘আয়রন সোর্ড’ শুরু করে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস বা ইজরায়েলের সেনা। বোমার আঘাতে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। এপর্যন্ত নিহত কমপক্ষে ২০ হাজার প্যালেস্তিনীয়। নিহত শতাধিক ইজরায়েলি সেনাও। বেনজির মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজা ভূখণ্ড। রাষ্ট্রসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল সমালোচনার মুখেও সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে তেল আভিভ।
২. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। বাঁধ ভাঙা জলের মতো ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার ফৌজ। ওঠে গেল গেল রব। তবে বুকে বল নিয় যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আমেরিকা ও ন্যাটো দেশগুলোর মদতে পালটা মার দিতে শুরু করে প্রাক্তন সোভিয়েত দেশটি। সেই প্রায় দুবছর হতে চললেও এখনও চলছে লড়াই। এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেও রাজি নয় কোনও পক্ষ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাফ বলে দিয়েছেন, উদ্দেশ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।
৩. গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সুদান: ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সুদান। এপ্রিল থেকে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসেনা। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীরই দুই জেনারেল- আবদেল আল ফতা আল বুরহান ও জেনারেল মহম্মদ হামদান দাগালো একে অপরের রক্তপিপাসু। প্রথম জন সুদানের সেনাপ্রধান এবং ২০১৯ থেকে দেশের সর্বোচ্চ শাসনব্যবস্থার জন্য ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলের প্রধান। দ্বিতীয় জন দেশের আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’ (আরএসএফ)-এর প্রধান তথা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য। দুজন জেনারেলের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার ভঙ্গ, লুটতরাজ, নৃশংসতা ও ধর্ষণে মদতের অভিযোগ রয়েছে। সেই লড়াই এখনও চলছে। প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
[আরও পড়ুন: পরমাণু হামলার হুমকি কিমের, কেন যুদ্ধপ্রস্তুতি উত্তর কোরিয়ার?]
৪. তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। ৭.৮ রিখটার স্কেলে কম্পনের জেরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে বাড়িঘর। প্রাণ হারান প্ররায় ৬০ হাজার মানুষ। এহেন বিপর্যয়ের পর সমালোচনার মুখে পড়েন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এর্দোগান। তাঁর আমলেই লাফিয়ে বেড়েছে বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা বলে অভিযোগ। সেই কারণেই এত প্রাণহানি। এবছরই সেপ্টেম্বরে মাটির নিচে প্লেটের ঠোকাঠুকিতে মরক্কোয় জেগে উঠে কম্পন-দৈত্য। প্রাণ হারান অন্তত ৩ হাজার মানুষ।
৫. অপারেশন দোস্ত: ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃত বন্ধুর বার্তা দেয় ভারত। এরদোগানের দেশে বন্ধুত্বের নিশান উড়িয়ে শুরু হয় ‘অপারেশন দোস্ত’। ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অষ্টম ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট দীপক তলোওয়ার মোতায়েন ছিলেন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নুরদাগি-তে। ফিরে এসে বেদনাসিক্ত মুখগুলোর ছবি তুলে ধরেছিলেন তিনি। উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসার জন্য শুধু কৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করেননি, অশ্রু ঝরাতেও দেখা গিয়েছিল তুরস্কের বাসিন্দাদের।
৬. অপারেশন কাবেরী: যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে (Sudan) আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে এপ্রিল মাসে শুরু হয় ‘অপারেশন কাবেরী’। প্রায় ৪ হাজার ভারতীয়কে যুদ্ধজর্জর দেশটি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আচমকাই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় আফ্রিকা মহাদেশের সুদানে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে বহু ভারতীয় আটকে পড়েন। তাঁদের দেশে ফেরানোর জন্য সৌদি আরব, ব্রিটেনের মতো একাধিক দেশের সঙ্গে কথা বলে বিদেশমন্ত্রক। রাষ্ট্রসংঘের (United Nations) মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের (Antonio Guterres) সঙ্গে বৈঠকও করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর।
৭. ব্রিটেনে তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২। মৃত্যু হয় ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। তাঁর মৃত্যুর পরেই উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা হন তৃতীয় চার্লস। তবে রাজপাট দখলের আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি ছিল। অবশেষে প্রায় আট মাস পরে ৬ মে ব্রিটেন ও ১৪টি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রাজা হিসাবে অভিষেক হয় তৃতীয় চার্লসের। ৭৪ বছর বয়সি তৃতীয় চার্লসই ব্রিটেনের রাজপরিবারের ইতিহাসে প্রবীণতম হিসাবে অভিষিক্ত হন।