কৃশানু মজুমদার: এফসি গোয়াকে হারিয়ে তিনি বলছেন, ”আমার সাফল্যের রহস্য কাউকে বলব না।”
মাদ্রিদে বসে আর এক স্পেনীয় কোচ বলছেন, ”ওর জন্য ভাল ব্যাপার ঠিকই তবে ভাগ্য সহায় ছিল।”
প্রথম জন মারিও রিভেরা (Mario Rivera)। যিনি জিততে ভুলে যাওয়া একটা দলকে জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছেন বুধবার। দ্বিতীয় জন মানোলো দিয়াজ (Manolo Diaz)। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে যাঁকে গোয়ার ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে মাদ্রিদে। একজন প্রাক্তন। আরেকজন নতুন।
এর আগেও মারিওর হাতে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গলের রিমোট কন্ট্রোল। আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেজ সরে যাওয়ার পরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁকে স্পেন থেকে উড়িয়ে এনেছিল ইস্টবেঙ্গল। এসেই নেমে পড়েছিলেন মাঠে। তখন কোয়েস জমানা লাল-হলুদে। আই লিগে আইজলের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলে হার মানতে হয়েছিল মারিওকে।
[আরও পড়ুন: ICC rankings: ভারতীয় ক্রিকেটে দুঃসময় অব্যাহত, এবার টেস্টে শীর্ষস্থান খোয়াল টিম ইন্ডিয়া]
এবারও খুব কঠিন পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে (SC East Bengal) জিতিয়ে উঠে বলছেন, ”ফুটবলে জেতা হারা থাকবেই। তবে নতুন একটা দল নিয়ে জেতা সবসময়েই কঠিন ব্যাপার।” সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় জানালেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ মারিও রিভেরা।
তাঁর পূর্বসূরি মানোলো দিয়াজ কী বলছেন? ”১২ নম্বর ম্যাচে এসে একটা দল প্রথম ম্যাচ জিতছে। এটা তো দুর্ভাগ্যেরই ব্যাপার বলতে হবে”, বলছিলেন প্রাক্তন লাল-হলুদ কোচ। এত পর্যন্ত পড়ে অনেকের মনে হতেই পারে মানোলো দিয়াজ হিংসুক। নতুন কোচ মারিওর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একজন। মেগা টুর্নামেন্টের বল গড়ানোর অনেক আগে থেকেই মানোলো দিয়াজের হাতে দেওয়া হয়েছিল দলের দায়িত্ব। কিন্তু আটটি ম্যাচে ডাগ আউটে বসে একটি ম্যাচও জিততে পারেননি তিনি। উল্টে দলের ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাঁকে এদেশ ছাড়তে হয়েছে।
মানোলো দিয়াজকে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হল, আপনার কাছেও তো সুযোগ ছিল কিন্তু আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। স্পেনের কোচ বলছেন, ”ব্যর্থ হয়েছি? আমি মানি না। আমি এখনও বিশ্বাস করি এই ইস্টবেঙ্গল দল আইএসএলের জন্য খুবই দুর্বল। নাহলে একটা দল ১২ নম্বর ম্যাচে এসে জয় পায়!” সাফ বলে দিচ্ছেন মানোলো।
লাল-হলুদের এই ব্যর্থতার জন্য অনেকেই তাঁর দিকে আঙুল তুলেছেন। সমালোচিত হয়েছেন। একাধিক বার দল গঠন নিয়ে নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন। সেই একই সুরে মানোলো দিয়াজ বলছেন, ”আগেও বলেছি। এখনও বলছি, এই দল দল খুবই দুর্বল। কর্তারা মোটেও পেশাদার নন। ফুটবলারদের মধ্যেও পেশাদারিত্বের অভাব। যদিও সবাই অবশ্য নন। এটাই ব্যর্থতার কারণ। আমি পেশাদার কোচ। নিন্দুকরা আমাকে কী বলছেন, তা নিয়ে আমি মোটেও ভাবিত নই।”
ফুটবলাররা অপেশাদার? কোচের কথায় ধিকিধিকি করে জ্বলা বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়তে পারে। কাদের কথা উল্লেখ করছেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ? বরফ গলাতে চাইলেন না মানোলো। বলছেন, ”আমি নাম নিতে চাই না। যাদের কথা বলছি, তারাও জানে এটা। আমি ওদের সামনেই বলেছিলাম।”
বুধবার নাওরেম মহেশের জোড়া গোলে শাপমুক্তি ঘটেছে এসসি ইস্টবেঙ্গলের। মানোলো দিয়াজ দায়িত্বে থাকার সময়ে মহেশের খুব প্রশংসা করেছিলেন। এদিন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র সম্পর্কে বললেন, ”খুব দ্রুতগতির প্লেয়ার, স্কিল রয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই। আরও কিছু ম্যাচ খেললে ও আরও উন্নতি করবে।”
গোয়া থেকে স্পেনে ফিরে যাওয়ার পরে এসসি ইস্টবঙ্গলের খেলা নাকি তিনি আর দেখেননি। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে লাল-হলুদের মশাল জ্বালানোও দেখেননি মানোলো দিয়াজ। তিনি বলছেন, ”এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচটা আমি দেখিনি। তবে পরিসংখ্যান থেকে দেখতে পাচ্ছি, এসসি ইস্টবেঙ্গলের নেওয়া চারটে শট থেকে গোল এসেছে দুটো। আর গোয়া ১৮ বার শট নিয়েছিল। গোয়ার দুটো মারাত্মক ভুল থেকে গোল পেয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। বল পজেশন-সহ অন্যান্য দিকেও এগিয়ে গোয়া। সেই কারণেই আমি বলছি ভাগ্য সহায় ছিল।”
তাঁর দেশের কোচ মারিওর প্রথম জয় নিয়ে একেবারেই আহ্লাদিত নন মানোলো। বরং মারিওকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলছেন, ”প্রথম ম্যাচটা জিতেছে মারিও। ওকে অভিনন্দন। তবে আগামিদিনে ওর কাজ আরও কঠিন।”