নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: দ্বিতীয়বার সাংসদ হিসেবে লোকসভায় প্রথম ভাষণ থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সপ্তদশ লোকসভা থেকে যেদিন তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সেদিনই ঘোষণা করেছিলেন তিনি বিজেপির শেষ দেখে ছাড়বেন। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে সেই বিষয়টিকে তুলে ধরে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন মহুয়া। বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী মোদি-কেও। প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি পরিসংখ্যান তুলে ধরে, 'এক আকেলা সব পর ভারি পড়া' স্লোগান দিয়ে ও তীব্র নিশানায় বিঁধেছেন তৃণমূল সাংসদ।
এদিন বক্তব্য রাখার জন্য মহুয়ার নাম ঘোষণা হতেই নিজের আসন ছেড়ে উঠে চলে যেতে উদ্যত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তা দেখেই মোদিকে কটাক্ষ করে মহুয়ার চিৎকার, "সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এখানে এতক্ষণ ছিলেন, আড়াই ঘণ্টা ছিলেন, এটাও শুনে যান, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। ভয় পাবেন না স্যার, দু-বার আমার কেন্দ্রে গিয়েছেন, প্রচার করতে, আজকে তো শুনে যান।" প্রধানমন্ত্রী অবশ্য মহুয়ার কথায় কর্ণপাত না করেই লোকসভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তাতে কটাক্ষ ছুঁড়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলেন, "আমার দুর্ভাগ্য। যার ইচ্ছে চলে যাক। আমাকে দমানো যাবে না, অগ্নিপরীক্ষা পার করে এখানে এসেছি।" তাঁর কথায়, "বিজেপির ঔদ্ধত্যর জবাব গণদেবতা দিয়েছে, বিজেপির রাজতন্ত্রকে ৩০৩ থেকে গণতন্ত্রই ২৪০ এ নামিয়ে এনেছে।" মহুয়ার ভাষণের শেষে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে করমর্দন করেন যান। অন্যান্য বিরোধী দলের সাংসদরা মহুয়ার কাছে এসে তাঁর ভাষণের প্রশংসা করেন।
[আরও পড়ুন: ন্যায় সংহিতায় বাড়ল পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ? কী বলছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী]
গতবার সাংসদ পদ খোয়ানোর সময়ে সংসদের এথিক্স কমিটির বৈঠকে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতই তাঁর সঙ্গে আচরণ করা হয়েছিল অভিযোগ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে টেনেই এদিন বিজেপির দিকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছেন মহুয়া। বলেছেন,"সাতমাস আগে এই সংসদ একটি কুরুসভায় পরিণত হয়েছিল। অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সামনে চিরহরণ হয়েছিল দ্রৌপদীর। যারা যারা দ্রৌপদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, তাদের অনেকেই এবার আর সংসদে ফেরেননি। তবে কৃষ্ণের মতো কৃষ্ণনগরের মানুষ আমার রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষবার যখন আমি এখানে বলতে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন আমাকে মুখ খুলতে দেওয়া হয়নি। তবে একজন সাংসদের কণ্ঠরোধের জন্য ক্ষমতাসীন দল যোগ্য জবাব পেয়েছে। একজন সাংসদকে বলতে না দেওয়ায়, তার বড় মূল্য বিজেপিকে চোকাতে হয়েছে । লোকসভায় আমায় দমনের চেষ্টায় মানুষ বিজেপির ৬৩ জন সদস্যকে একেবারে বসিয়ে দিয়েছেন।"
অতি দর্পে হত লঙ্কা বলে কটাক্ষ করেন মহুয়া। তাঁর দাবি, বাংলায় প্রধানমন্ত্রী যেখানে ২৩টা জনসভা করেছিল তার মধ্যে বিজেপি ২০টা হেরেছে। মহারাষ্ট্রে ১৮টি জনসভার জায়গাতে ১৫টিতে হার। একের পর এক পরিসংখ্যান দিয়ে মোদি-র জনসভায় জায়গাতেই যে বিজেপি হেরে গিয়েছে সেই বিষয়টি তুলে ধরে, ''এক আকেলা সব পর ভারি পড়া' বলে বার বার স্লোগান দেন মহুয়া। তাতে যোগ্য সঙ্গত করেছেন পাশে বসে থাকা তৃণমূলের তরুণ তুর্কি সায়নী ঘোষ। সবমিলিয়ে এদিন সংসদে ঝাঁজালো আক্রমণ শানালেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।