shono
Advertisement

হিন্দু পরিচয়ে বিয়ে, স্ত্রীকে ধর্ষণে মদত, আদ্রার TMC নেতা খুনের মূলচক্রীর কীর্তিতে হতবাক পুলিশ

ঝাড়খণ্ড পুলিশের খাতায় 'ওয়ান্টেড' আরজু।
Posted: 10:16 PM Jun 28, 2023Updated: 10:16 PM Jun 28, 2023

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সুদর্শন। পাতলা ছিপছিপে একেবারে পেটানো চেহারা। হ্যান্ডসাম যুবক বলতে যা বোঝায়। চোখ-মুখ দেখলে বোঝা যাবে না ক্রিমিনাল রেকর্ড রয়েছে ভুরি ভুরি। মাথায় কেশরের টিকা, হাতে তাগা পরে হিন্দু সেজে বিয়ে করেছিল। বিবাহিত স্ত্রী যখন বুঝতে পারেন তখনই অশান্তির শুরু। বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চান। ঠিক তখনই নিজের সাগরেদদের কাজে লাগিয়ে স্ত্রীকেই গণধর্ষণে অভিযুক্ত। আর সেই ছবি সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল করে দেয়। ২০২১ সালের এই ঘটনা বিহার বা উত্তরপ্রদেশের নয়। পুরুলিয়া থেকে কিছুটা দূরে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বোকারোতে। তারপর থেকেই সে ঝাড়খণ্ড পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’। আদ্রা ডিভিশনের রেলের সিন্ডিকেটের মাথা। শহর তৃণমূল সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী।

Advertisement

তার নাম আরজু মালিক। আদি বাড়ি বিহারের জামুই জেলার আরসারে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঝাড়খণ্ডের স্টিল সিটি বোকারো জেলার মারাফরি থানার আজাদনগরে থাকত। স্ত্রীকে গণধর্ষণের মামলায় ‘ওয়ান্টেড’ থাকায় বোকারো আদালতের নির্দেশে পুলিশ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ছেলের জমিতে থাকা বিশাল বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় ঝাড়খণ্ড পুলিশ। ফলে রেলের সিন্ডিকেট রাজের ক্ষমতা খর্ব হয় আরজুর। গা ঢাকা দিয়ে আদি বাড়ি বিহারের জামুইয়ে পাকাপাকিভাবে ঘাঁটি গাড়ে। সেখান থেকেই সুদূর পুরুলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের রেলের সিন্ডিকেটের আগের মতই কিংপিন হতে চায়। ২৫৯ কিমি দূরে থাকা আরজুর গলা শুনেই থরহরি কম্পমান হতেন আদ্রা ডিভিশনের রেলের ঠিকাদাররা। হাতে চলে আসত টাকা।

[আরও পড়ুন: ভোটের আগে আবারও উত্তপ্ত কোচবিহার, তৃণমূল ও বিজেপির সংঘর্ষে চলল গুলি, পুড়ল বাইক]

শুধু গণধর্ষণ মামলায় ঝাড়খণ্ড পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’ নয়। আরও একাধিক খুনের মামলাতেও ঝাড়খণ্ডে  অভিযোগ রয়েছে। সবে মিলিয়ে ওই রাজ্যেই ৪৫টা মামলা। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। কিন্তু এই কুখ্যাত দুষ্কৃতীর যেখান থেকে রসদ আসত রেলের সেই সিন্ডিকেট রাজের উৎসস্থলে এর আগে পৌঁছতে পারেনি ঝাড়খণ্ড বা এই রাজ্যের পুলিশ। ফলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই গ্রেপ্তারকে বড়সড় সাফল্য হিসেবেই দেখছে রাজ্য পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদ্রার খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আর কী কী তথ্য পাওয়া যায় সেটা আমরা দেখছি। “

ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র পেট চালানোর জন্য সুদূর বিহারের জামুই থেকে ঝাড়খন্ডের বোকারোতে পা রেখে শ্রমিকের কাজ শুরু করেছিল। স্টিল সিটিতে দিনমজুরের কাজ করতে করতেই খুব দ্রুত চুরিতে হাত পাকায় আরজু। প্রথমে লোহা-লককর চুরি। পরে সেই হাতেই আসে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল-রিভলবার। ২০০৩ সালে আজাদনগরে গুলি চালানোর ঘটনায় প্রথম ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় এই আরজু। এরপরেই জেলে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে দিনের পর দিন থেকে বোকারো স্টিল সিটিতে অপরাধ জগতের ‘ছোটা ডন’ বনে যান।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তার চোখরাঙানিতে আসতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকা। এভাবেই উল্কা গতিতে উত্থানে রেলের সিন্ডিকেটের মাথা হয়ে যায়। কোন কাজ হলেই তাকে ২ থেকে ৬ শতাংশ টাকা দিতে হতো। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি জোনাল টেন্ডারে ৩০০ কোটি টাকার কাজ হলে ছ’শতাংশর হিসাবে তার পকেটে আসত প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এছাড়া ফি সপ্তাহে আদ্রা ডিভিশনের ছোট-ছোট টেন্ডার তো রয়েছে। এরপরেই কোটিপতি আরজুর মনে ধরে যায় বোকারো স্টিল সিটির এক সুন্দরী তরুণীকে। তাকে বিয়ে করতে হিন্দু সাজে আরজু মালিক। ঝাড়খণ্ডের এমন ওয়ান্টেডের প্রোফাইল শুনে হতভাগ পুরুলিয়া জেলা পুলিশের দুঁদে অফিসাররাও।

[আরও পড়ুন: ‘নিখোঁজ’ কংগ্রেস প্রার্থী, ভোটের আগে সামশেরগঞ্জে পোস্টার রহস্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement