সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু বাংলা সিনেমার ইতিহাস নয়। সম্ভবত ভারতীয় সিনেমাও এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। শুক্রবার মুক্তি পেল আমাজন অভিযান-এর ট্রেলার। শংকরের অভিযানের স্বাদ আর কেবল বাংলাতে সীমাবদ্ধ নেই। সর্বার্থেই পৌঁছেছে জাতীয় মঞ্চে। মোট ছ’টি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে এ ছবির ট্রেলার। বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে যা নিঃসন্দেহে এক সাড়া জাগানো মুহূর্ত।
[এবার পর্দা কাঁপাতে আসছে সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি ‘প্রফেসর শঙ্কু’]
বাংলা ভাষায় ফ্যান ফিকশন জঁরের লেখা যে বহুল প্রচারিত এমনটা নয়। এই গোত্রের চলচ্চিত্রের উদাহরণ স্মৃতি হাতড়ে তেমন মেলে না। তার উপর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন একটি চরিত্রকে নিয়ে কাজ করেছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, যাকে প্রত্যেক বাঙালি মিশিয়ে নিয়েছে নিজেদের অস্থি-মজ্জায়। অপু যদি সব বাঙালির কাছে রোমান্সের ঠিকানা হয়, তবে অ্যাডভেঞ্চারের ডেস্টিনেশন অবশ্যই চাঁদের পাহাড় আর তার নায়ক শংকর। বস্তুত ছাপোষা এক বাঙালি ছেলের বিশ্ব জয়ের মধ্যে বাঙালি যেন বরাবর নিজেরই জয়ের ছবি দেখেছে। ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়তে বসে কল্পনায় নিজেকে শংকর ভাবেনি, এমন বাঙালি হাতে গোনা। সেটাই বিভূতিভূষণের জাদু। শুধু শব্দ দিয়েই কলমের সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তিনি তৈরি করতে পারেন ইন্দ্রজাল। শংকরের কীর্তিকলাপকে তাই প্রতি বাঙালি তার নিজের বলেই মনে করেছে।
হিন্দিতে ছবির ট্রেলার:
[ জায়সির কবিতা অবলম্বনেই ‘পদ্মাবতী’, সংসদীয় কমিটিকে বনশালি ]
এহেন চাঁদের পাহাড়-কে চলচ্চিত্রে আনা শক্ত কাজ ছিল। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েছিলেন কমলেশ্বর। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত দুঃসাহসিক হয়ে আছে সেই উদ্যোহ। হ্যাঁ, সমালোচনা হয়েছে। এ কথা স্বীকার করে নিতে হয় যে, এই ধরনের ছবিতে যে ধরনের চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্সের দরকার হয়, সেই দিক থেকে বাংলা ছবি এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। বিশেষত যে সময়ে ঘরে বসে এক ক্লিকে হলিউডের নানা ছবি দেখা যায়, তখন ফারাকটা খুব প্রকট হয়ে পড়ে। বুনিপের রহস্যভেদও খুশি করতে পারেনি অনেক দর্শককে। শংকরের অ্যাডভেঞ্চারে বিভূতিভূষণের ঘরানাকে বেশ খানিকটা লার্জ স্কেলে প্রজেক্ট করেছিলেন পরিচালক। মাত্রা বেঁধেছিলেন অন্য তারে। তবে বিভূতিভূষণের শংকর খানিকটা অন্যরকম হয়েও বাঙালির অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়তাকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিল যথাযথ ভাবেই। সমালোচনা হলেও বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এ ছবি যে অন্যতম নীরিক্ষা তা অস্বীকার করা যায় না।
এবার আরও বড় ঝুঁকি নিয়েছেন পরিচালক। শংকরের গল্প বিভূতিভূষণ ঠিক যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই কলম ধরেছেন তিনি। এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অভিযান। চাঁদের পাহাড় শেষ করার পর, প্রতি বাঙালিই মনে মনে নয়া অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। কমলেশ্বর সে কল্পনাকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন। তবে এখানে চরিত্র করে নিয়েছেন সেই শংকরকেই। অভিভাবক হয়ে আছেন বিভূতিভূষণ। ফ্যান ফিকশন বা পিঞ্চ অফ গোত্রের রচনায় যেমনটা হয়। কিন্তু এ পথ যে তাঁকে একলাই চলতে হবে তা পরিচালকের থেকে ভাল আর কেউ জানেন না। ফলে ছবিতে শংকর যতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বাইরে পরিচালকও ঠিক ততটাই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
[ সব চরিত্রই কাল্পনিক নয়! সাত পাকে বাঁধা পড়লেন রিল জুটি গৌরব-ঋদ্ধিমা ]
গল্পটি অজানা নয়। ট্রেলার মুক্তির আগেই প্রকাশ পেয়েছে গ্রাফিক নভেল। এবার তার চলচ্চিত্রায়নের ঝলক দেখা গেল ছবিতে। হ্যাঁ, ধারেভারে এ ছবি যে বাংলা ভাষায় নয়া মাইলস্টোন হতে চলেছে তা মিনিট দুয়েকের ট্রেলারেই আন্দাজ করা যায়। তার উপর মোট ছটি ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে এই ট্রেলার। বাংলা ছাড়া, হিন্দি, ওড়িশা, তামিল, তেলুগু ও অহমিয়া ভাষাতে একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে ট্রেলার। ফলে এবার দর্শকের রেঞ্জটাও বেশি। চ্যালেঞ্জটাও অকল্পনীয়। বিগত কয়েকটি ছবিতেই নিজেকে ভাঙছেন দেব। চ্যাম্প থেকে ককপিট-এ তিনি হাজির হয়েছেন একেবারে অন্য রূপে। চাঁদের পাহাড়, বুনোহাঁস থেকে যে দেবের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা যেন এবার আরও পরিণত। তাঁর কেরিয়ারে এ যে অন্যতম সেরা দিকচিহ্ন হয়ে থাকবে তা তিনি ভালই জানেন। ট্রেলার দেখে ইঙ্গিত মিলছে, নিজেকে নিংড়েই দিয়েছেন নায়ক। নায়ক থেকে অভিনেতা হিসেবে উত্তরণের এতবড় সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি। তাছাড়া বাঙালির অ্যাডভেঞ্চারের সর্বভারতীয় রূপটি যে তাঁর মুখের অবয়বে, অভিনয়ে-অভিব্যক্তিতেই ফুটে উঠবে, সে ব্যাপারেও তিনি সম্পূর্ণ অবহিত।
পরিচালক কমলেশ্বর ঝুঁকি নিয়েছেন। ঝুঁকি নিয়েছে প্রযোজক সংস্থাও। হ্যাঁ, এবারও হয়তো গ্রাফিক্স ইত্যাদি নিয়ে মৃদু গুঞ্জন উঠবে। সমালোচনা তো থাকবেই। কিন্তু কল্পনার অভিযানে বাধা দিচ্ছে কে! আসুন ট্রেলারেই আপাতত শরিক হই সে অভিযানের।
The post ইতিহাসের দোরগোড়ায় ‘আমাজন অভিযান’, ৬টি ভাষায় মুক্তি ট্রেলারের appeared first on Sangbad Pratidin.