অরূপ বসাক, মালবাজার: দশমীর বিসর্জনে শোকের ছায়া নেমেছিল মালবাজারে (Malbazar)। গত ৫ অক্টোবর ডুয়ার্সের (Dooars) মাল নদীতে দুর্গা ভাসানের সময়ে আচমকা হড়পা বানে তলিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮ জন। আহতের সংখ্যা ছিল ১৩। সেদিনের সেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মালবাজার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তুহিনদীপ অধিকারী হারিয়েছেন বাবা তপন অধিকারীকে, স্বপন অধিকারী হারিয়েছেন পুত্র স্বর্ণদীপ অধিকারীকে, স্বামী শুভাশিস রাহাকে হারিয়েছেন অর্চনা রাহার। একইভাবে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সমরেন্দ্র পোদ্দারের মেয়ে সুস্মিতা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপ পণ্ডিতের স্ত্রী-পুত্র, ১০ ওয়ার্ডের সন্তু সাহার পরিবারের দুই সদস্য তলিয়ে গিয়েছেন মৃত্যুর অতল গহ্বরে। সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে শোকগ্রস্ত গোটা শহর। কিন্তু সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) এই স্বজনহারা মানুষজনের কাছে ছুটে যাওয়ার পর কিছুটা আলো ফিরল। মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারের প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁদের ডেকে পাঠানোয় চাকরির আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সকলেরই বক্তব্য, সভায় যাবেন, যদি একটা চাকরি হয়!
সোমবার বিকেলে মালবাজার পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রী ছুটে যান অধিকারী, রাহা, পোদ্দারদের বাড়িতে। তাঁদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেন, চা খান। হয়ে ওঠেন তাঁদের কাছের মানুষ। মঙ্গলবার মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবনে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে শোকমগ্ন পরিবারের সদস্যদের ডেকে কথা বলবেন ওই আদর্শ বিদ্যা ভবনে। তার আগে তিনি নিহতদের বাড়ি গিয়ে নিজেই দেখা করে এলেন। ইতিমধ্যে পরিবারগুলির কাছে সরকারের তরফে আহ্বান এসেছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে শোকগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবেন, এমনই জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ডেকে পাঠানো হয়েছে বিপর্যয়ের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়া যুবকদেরও। তাঁদের তৎপরতায় সেদিন তলিয়ে যাওয়া থেকে বেঁচে ফিরেছেন অনেকেই। হয়ত তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হবে।
[আরও পড়ুন: ‘চুরি হওয়া চাকরি ফেরত চাই’, সল্টলেকের রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ ২০১৪’র টেট উত্তীর্ণদের]
তুহিনদীপ অধিকারী জানান, ”আমাদের বাড়িতে এসডিও অফিস থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গেছে। আমাদের বাড়ি থেকে মা আর বোন যাবে। যদি চাকুরি কথা ওঠে তবে বোন করবে।” পুত্র হারানো স্বপন অধিকারী বলেন, ”আমি ও আমার মেয়ে যাব।” সমরেন্দ্র পোদ্দারের কথায়, ”মেয়েকে হারিয়েছি। মন ও শরীর ভাল নেই। তবু ছেলেকে নিয়ে যাব। যদি ছেলের চাকুরি হয় তবে করবে।” এভাবেই প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাবেন বলে জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শুধুমাত্র পণ্ডিত পরিবার পারলৌকিক কাজের জন্য গয়ায় গিয়েছেন। তাঁরা যদি ফেরেন, তবে মঙ্গলবারের সভায় যাবেন। তবে এঁদের সকলের একটাই প্রার্থনা, এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।