বাবুল হক, মালদহ: এবার পুলিশের হাতে আসিফের গোপন মোবাইল। ওই মোবাইল এবং তাতে থাকা সিম থেকেই অন্ধকার জগতের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করত কালিয়াচক (Kaliachak) কাণ্ডে ধৃত আসিফ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মোবাইলে অনেক সন্দেহজনক ব্যক্তির নম্বর রয়েছে।
তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার বলেন, “যে মোবাইলটি আসিফ লুকিয়ে রেখেছিল, সেটিও উদ্ধার হয়েছে। মোট তিনটি মোবাইল উদ্ধার হল। গোপন মোবাইলে অনেক কিছু তথ্য রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কালিয়াচকের ১৬ মাইলে একই পরিবারের চারজনকে খুন করে বাড়িতেই পুঁতে রেখেছিল ছোট ছেলে আসিফ মহম্মদ। পৌনে চার মাস পর দেহগুলি উদ্ধার হয়। ধৃত আসিফ মহাম্মদ ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিল। বৃহস্পতিবার তাকে মালদহ আদালতে (Court) পেশ করা হয়। এদিন আসিফকে আরও দু’দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাকে ৩ জুলাই ফের আদালতে পেশ করা হবে।
[আরও পড়ুন: বিরোধের আবহে রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কী নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা?]
এদিন সরকার পক্ষের আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল জানান, ধৃত আসিফ পুলিশের জেরায় স্বীকার করে নিয়েছে, সে একাই বাবা-মা, ঠাকুরমা ও বোনকে খুন করেছে। চারটি দেহ সে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল, কীভাবে খুন করেছিল, সেটাও পুনর্গঠন করে পুলিশকে দেখিয়েছে। এই খুনের ঘটনার তদন্তে যা যা তথ্যপ্রমাণ দরকার, সবটাই পুলিশ পেয়েছে গিয়েছে। উদ্ধার হয়েছে কফিনের প্লাইউড, উড কাটার যন্ত্র, খুনের আগে ঘুমের ওষুধ মেশানো হয়েছিল দেড় লিটারের ম্যাঙ্গো জুসের বোতলে। সেই বোতল পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার হয়েছে চৌবাচ্চায় জল দেওয়ার পাইপ, মুখে লাগানো সেলোটেপ এবং প্রচুর পরিমাণে পেনড্রাইভ। আগেই পাঁচটি সেভেন এমএম পিস্তল, দশটি ম্যাগজিন ও ৮৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছিল। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, “খুনে ব্যবহৃত সমস্ত উপকরণ বাজেয়াপ্ত হয়েছে।”
কালিয়াচকের ১৬ মাইল গ্রামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ঠান্ডা পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবা, মা, দাদা, বোন এবং দিদাকে খাওয়ায় আসিফ। অচৈতন্য হয়ে পড়েন প্রত্যেকে। তারপরই তাঁদের মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে দেয় সে। বেঁধে দেওয়া হয় হাত-পা। আগে থেকেই গুদামঘরে একটি চৌবাচ্চা তৈরি করেছিল আসিফ। অল্প অল্প করে তাতে জলও জমায় সে। গুদামঘরে যাতায়াতের জন্য তৈরি করে একটি সুড়ঙ্গ। ঘটনার দিন সুড়ঙ্গের মাধ্যমে গুদামঘরে একে একে পাঁচজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। চৌবাচ্চায় ফেলে দেওয়া হয় প্রত্যেককে। তবে আসিফের দাদা আরিফের মুখের সেলোটেপ কোনওভাবে খুলে গেলে জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর। ভাইয়ের সঙ্গে তখন ধস্তাধস্তি করে বাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে কলকাতায় চলে যান আরিফ। সপ্তাহ দুয়েক আগে দাদা আরিফ কলকাতা থেকে এলাকায় ফিরে কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করে। গ্রেপ্তার করা হয় আসিফকে।