বাবুল হক, মালদহ: বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা (Kolkata)। ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে মারা গিয়েছেন চারজন শ্রমিক। আর এই ঘটনা জানার পরই কার্যত শোকের ছায়া মালদহে (Maldah) ওই শ্রমিকদের গ্রামের বাড়িতে।
জানা গিয়েছে, মৃত ওই চার পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব তালসুর এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। এদিন কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুঁটিয়ারি এলাকায় হাই ড্রেনের কাজ করার সময় সেখানেই বিষাক্ত গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁদের বাঁচানো যায়নি। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তিন শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন তিন ভাই আলমগীর হোসেন(৪০), জাহাঙ্গীর আলম(২৬), সাবির আলি(২৪)। অন্যজন লিয়াকত আলি(২২) তাঁদেরই প্রতিবেশী। তাই দুপুরে তাঁদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা এলাকায় পৌঁছতেই পরিবারের পাশাপাশি গোটা এলাকাজুড়েই শোকের ছায়া নেমে আসে।
[আরও পড়ুন: আলোচনা ছাড়াই কেন শিক্ষাক্ষেত্রে নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রের? প্রশ্ন তুলে মোদিকে চিঠি মমতার]
মৃতদের পরিবার সূত্রে খবর, মৃত চারজনই দীর্ঘদিন ধরেই ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। কখনও বেঙ্গালুরু, কখনও কেরলে! আগে একসময় কলকাতাতেও কাজ করেছেন। তবে লকডাউন শুরু হতেই করোনার ভয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই মাস তিনেক আগে তাঁরা কলকাতায় যান। রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার পূর্ব পুটিয়ারিতে এদিন একটি ক্লাবের কাছে উঁচু নর্দমার আবর্জা সাফাই করার কাজ করার সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নালার বিষাক্ত গ্যাসে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর রেল লাইনের ওপারে তালসুর এলাকায় বাড়ি মৃতদের। মাটির বাড়ির উপরে টালির ছাদ। প্রত্যেকেই অভাবি। তোরাব আলির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় আলমগীর বিবাহিত। তার নাবালক দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। এছাড়া বাড়িতে রয়েছেন মা রোজিনা বিবিও। দুর্ঘটনায় তিন ছেলেরই মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন সকলেই। মৃত তিন ভাইয়ের বাবা তোরাব আলি বলেন, সকালেই বড় ছেলেটা ফোন করেছিল। স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছিল। কিন্তু তিন ছেলেই যে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আমার সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বাঁচব?”
[আরও পড়ুন: জ্বালানির বিরুদ্ধে জারি প্রতিবাদ, ইলেকট্রিক স্কুটারে চালকের আসনে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী!]
এদিকে, মৃত লিয়াকতের স্ত্রী কোহিনুর বিবি আবার অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর কথা বলার ক্ষমতা নেই। স্বামীর মৃত্যুর কথা জানার পরেই মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। কোনও রকমে বলেন, ‘রাতেই ফোন করে কেমন আছি খোঁজখবর নিয়েছিল। সেটাই যে শেষকথা বুঝতে পারিনি।’ অন্যদিকে, আবার এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন।