বাবুল হক, মালদহ: মায়ের মৃত্যুর পর মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ কীভাবে বাড়ি নিয়ে যাবেন, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন হতভাগা ছেলে। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য ছিল না। ভোররাত পর্যন্ত হাসপাতালের উঠোনেই মায়ের নিথর দেহ নিয়ে বসেছিলেন তিনি। কোনও রকমে খবর পেয়ে যায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করল হাসপাতালই।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২২ দিন আগে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন মালদহের মোথাবাড়ির কুরিয়াটারের বাসিন্দা রেজিনা বেওয়া (৮৫)। সেই সময় থেকে ওই বৃদ্ধা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি হন। দিনকয়েক আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। বৃদ্ধাকে তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। চিকিৎসা চালাকালীন বৃহস্পতিবার রাতে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। মায়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে গেলে অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি ভাড়া করার প্রয়োজন। কারণ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য ছিল না বৃদ্ধার ছেলে। অভাবী ছেলে মেহরাবের হাতে কোনও টাকাপয়সা ছিল না। ওষুধপত্রের খরচ জোগাতে সব পয়সাকড়ি ফুরিয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: শীঘ্রই তৃণমূলে হিরণ! নতুন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই আরও জোরালো জল্পনা]
ভোররাত পর্যন্ত হাসপাতালের উঠোনেই মায়ের নিথর দেহ নিয়ে বসেছিলেন তিনি। কোনও রকমে খবর পেয়ে যায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জলপাইগুড়িতে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলে ও স্বামীর হেঁটে যাওয়ার ঘটনা ভাইরাল হয়ে যায়। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে যায়। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যদি ঘটে মালদহে? এমন আশঙ্কায় মেহরাবের মায়ের দেহের কাছে পৌঁছে যান মেডিক্যাল কলেজের কর্মীরা।
সমস্যা শুনে তড়িঘড়ি হস্তক্ষেপ করেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা: পুরঞ্জয় সাহা। অবশেষে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে। শুক্রবার ভোরে মায়ের দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেন মোথাবাড়ির মেহরাব হক। এলাকার হতদরিদ্র দিনমজুর মেহরাব হক জানিয়েছেন, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি পুরঞ্জয় সাহার সহযোগিতায় শববাহী গাড়ি তাঁরা নিখরচায় পেয়েছেন। মায়ের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে পেরেছেন।