সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরোধিতার সুর বদলে গিয়েছে আগেই। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতের গুরুত্ব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। চরম আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা এহেন মালদ্বীপকে ৩০০০ কোটি টাকা সাহায্যের ঘোষণা করেছে ভারত। এর পরই ভারত সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন মাল প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানালেন মালদ্বীপে আসার জন্য।
বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেই সাক্ষাতের পরই জানা যায়, মাল রাষ্ট্রকে ৩০০০ কোটি টাকা বা ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা বিনিময়েরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। যাতে মালদ্বীপ নিজের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংকট কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এক বিবৃতিতে মুইজ্জু নিজেও বিষয়টি স্পষ্ট করে ভারতের প্রশংসা করেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, "ভারত সরকার আমাদের ৩০০০ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিপুল সহায়তার জন্য আমরা ভারতে কাছে কৃতজ্ঞ। মালদ্বীপ সর্বদা ভারতের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।" এর পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে মালদ্বীপে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান মুইজ্জু। তিনি জানান, 'ভারতীয়রাই আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।' এদেশের মানুষ যাতে ফের পর্যটনের জন্য মালদ্বীপকে বেছে নেন সে বার্তাও দেন তিনি।
যদিও কয়েকমাস আগেও এতটা নরম ছিল না মালদ্বীপ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের পর থেকে তাল কাটে দিল্লি-মালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। সংঘাত তুঙ্গে ওঠে। মোদিকে নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন যুব, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রকের দুই মন্ত্রী মালশা শরীফ এবং মরিয়ম শিউনা-সহ আর এক মন্ত্রী আবদুল্লাহ মাহজুম মজিদ। গোটা ভারত জুড়ে শুরু হয় ‘বয়কট মালদ্বীপ’। এই পরিস্থিতিতে চাপ বাড়তে থাকে মালদ্বীপের উপরে। শুধু তাই নয়, মাঝে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেওয়ার জন্যও বলেছিল সে দেশের সরকার। সব মিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে যথেষ্ট ফাটল তৈরি হয়। তবে ভারত বিরোধী মনোভাবে যে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারার পর তা বেশ বুঝতে পারেন মহম্মদ মুইজ্জু। এর পরই ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মেটাতে তৎপর হন মুইজ্জু। সেই লক্ষ্যেই এবারের দিল্লি সফর তাঁর।
অবশ্য এর আগেও একাধিকবার মালদ্বীপকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এর আগের সরকারের আমলে মলদ্বীপ থেকে মোট ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ট্রেজারি বিল কিনেছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। প্রতিটি ৫০ মিলিয়ন ডলারের। জানুয়ারি মাসে একটি ৫০ মিলিয়ন ডলারের বিল শোধ করে দেয় মুইজ্জু সরকার। কিন্তু পরবর্তী একটি ৫০ মিলিয়ন বকেয়া ছিল মে মাসে। সেটি শোধের সময়সীমা এক বছরের জন্য বাড়িয়ে দেয় ভারত।